ময়নাগুড়িতে তৃণমূলের জন গর্জন সভায় সংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।
চা শ্রমিকদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ‘মোদী’র ঘোষণা করা হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ কোথায় গেল? চা বলয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পরে, বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে অভিষেকের প্রথম সভা ছিল ময়নাগুড়িতে। তৃণমূল সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের এ দিনের সভায় জলপাইগুড়ির লোকসভা প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় ছাড়াও কোচবিহারের প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়া, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক, দার্জিলিঙের প্রার্থী গোপাল লামা ছিলেন।
কোচবিহার বাদ দিলে, বাকি তিন লোকসভার ক্ষেত্রেই যে কোনও দলের জয়-পরাজয়ের নেপথ্যে অন্যতম নির্ণায়ক চা বলয়। স্বাভাবিক ভাবেই অভিষেক চা বলয়ের উদ্দেশে বার্তা দেবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। বৃহস্পতিবারের সভা থেকে বাংলাকে বঞ্চনার তালিকায় চা বলয়কেও যুক্ত করলেন অভিষেক। সঙ্গে ‘মোদী গ্যারান্টি’র পরিবর্তে শোনালেন ‘দিদির গ্যারান্টি’ও। তিনি বলেন, “মোদী এসে বলেছিলেন, চা শ্রমিকদের কল্যাণে নাকি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। কোথায় গেল সেই টাকা? এরা বলে, কিন্তু কাজ করে না।” অভিষেকের সংযোজন, “আমি মালবাজারে চা শ্রমিকদের নিয়ে সভা করে মজুরি বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম। পরে, সেই মজুরি বেড়েছে। আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন চা শ্রমিকদের মজুরি ছিল মাত্র ৬৭ টাকা।”
লোকসভা ভোটের আগেও চা শ্রমিকদের মজুরিতে একপ্রস্ত বৃদ্ধির আশা করেছিল তৃণমূল সংগঠন। যদিও তার কোনও ঘোষণা হয়নি। অভিষেকের মঞ্চ থেকেও তেমন ঘোষণা থাকতে পারে বলে আশা করেছিলেন অনেকে, তা-ও হয়নি। তৃণমূলের এক চা শ্রমিক নেতার দাবি, “ন্যূনতম মজুরি চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে কথাবার্তা চলছে। এখন নতুন কোনও ঘোষণা করলে, আলোচনায় জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই হয়তো বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।”
সভায় বিজেপিকেই মূল নিশানা করেন অভিষেক। অন্য বিরোধীদের প্রতি ছিল না কোনও আক্রমণ। বাংলার ‘বঞ্চনার’ হিসাব প্রসঙ্গে এক বার শুধু বলেছেন, “ভারতের মানুষের কাছে তো কাগজ চাইছেন নাগরিকত্ব দেবেন বলে, কিন্তু নিজেদের হিসেবের কাগজ কই?” অভিষেক বলেন, “তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে রামমন্দির হল, কিন্তু আপনার মাথার ওপর ছাদ হল কি? রাজ্য সরকার তো জল্পেশ মন্দিরের পরিকাঠামোয় দশ কোটি টাকা খরচ করেছে। আমরা কি সে কথা বলে ভোট চাইছি?”
কেন্দ্রীয় এজেন্সি থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়েও আক্রমণ করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “বিজেপির কাছে সব আছে ইডি, সিবিআই, আয়কর, কেন্দ্রীয় বাহিনী, বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম, টাকা, মেশিনারি। তবু ওরা বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারছে না। কারণ মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে।’’
পুলিশের হিসাবে এ দিন সভায় তিরিশ হাজারের বেশি ভিড় হয়েছিল। তৃণমূলের দাবি, সংখ্যাটা চল্লিশ হাজারের বেশি। জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, “শুনলাম, সভায় ভিড় তেমন হয়নি। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরেই খালি অজুহাত এবং দোষারোপ শুরু করেছেন।”
অভিষেক অবশ্য বলেন, “আবার খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে। আজকে এখানে খুঁটিপুজো করে গেলাম, মে মাসের শেষে, জুনের আগে বিরোধীদের বিসর্জন দেখিয়ে দেব।”