ঝাড়গ্রামে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘কালীপদকে ইভিএমের দু’নম্বর বোতাম টিপে দু’নম্বরি নেতাদের কষে থাপ্পড় লাগান। আমি সকলকে কথা দিয়ে যাচ্ছি, তার প্রতিদান আমি দেব। সার্বিক উন্নয়ন যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয় জঙ্গলমহলে, তা সুনিশ্চিত করব। আবার দু’মাস পর দেখা করে সবার সঙ্গে জয়ের আনন্দ ভাগ করে নেব।’’ বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিষেক বলেন, ‘‘আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল আমি হয়তো পালিয়ে যাব। বছর খানেক আগে। আমি তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়েছি। বিরবাহারা রেগে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম প্ররোচনায় পা দেবে না। আমরা শান্তির সঙ্গে কাজ করব। নিশ্চিন্তে ঘুমোবেন। কথা দিয়ে গেলাম, আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডার কেউ বন্ধ করতে পারবে না।’’
‘‘কেউ যদি বলেন, বিজেপি আবাসের টাকা দিয়েছে, তাঁকে বেঁধে রাখবেন। আমি বলে দিয়ে গেলাম। রেকর্ড করুন। এঁরা মিথ্যাবাদী। এক পয়সা আবাসের জন্য দেননি।’’ তোপ অভিষেকের।
অভিষেক বললেন, ‘‘হিরের উপর জিএসটি শূন্য, রান্নার জিরের উপর জিএসটি বসেছে, এই জনদরদি সরকার বিজেপির।’’
‘‘এখানে উর্বর জমির পরিমাণ কম। নয়াগ্রামে দাঁড়িয়ে আছি। এখানে মাটি কাটলে জলস্তর পাবেন ৫০ ফুট নীচে। আমাদের সরকার পদক্ষেপ করেছে। করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই করবেন। আগে কী পরিস্থিতি ছিল এই ঝাড়গ্রামের? কখনও বন্ধ, কখনও হরতাল, কখনও মানুষ মারার রাজনীতি চলেছে। তার পর আপনারা পরিবর্তন আনলেন। তার পর উন্নয়নের জয়যাত্রা চলছে। সর্বত্র আমাদের সরকার কাজ করেছে। ১০ বছরে ১০ পয়সা দিয়ে এখানে সাহায্য করেনি বিজেপি। যিনি ঘর করেছিলেন ১০ বছর, তিনিও বলছেন।’’ বললেন অভিষেক।
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ড আনতে বলুন। বিতর্ক হোক। এক দিকে আমি থাকব। অন্য দিকে বিজেপির কোনও নেতা। তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে তর্ক করতে এলে ভোকাট্টা দিয়ে মাঠের বাইরে বার করে দিতে না পারলে আমার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়।’’
প্রধানমন্ত্রী চাইলেও আপনাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করতে পারবেন না। আমি গ্যারান্টি দিয়ে যাচ্ছি।
অভিষেক বলেন, ‘‘আপনারা কি চান না যে, লক্ষ্মীর ভান্ডার চলুক?’’ বিজেপি নেত্রীর বক্তব্যের অডিয়ো ক্লিপ চালিয়ে সভায় সবাইকে শোনালেন অভিষেক। কোচবিহারের বিজেপি নেত্রী দীপা চক্রবর্তীর বক্তব্যের সমালোচনায় অভিষেক।’’
অভিষেকের কথায়, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা বিজেপি বন্ধ করে রেখেছে। নবজোয়ার যাত্রায় যখন ঝাড়গ্রামে এসেছিলাম, মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। দুই আদিবাসী ভাই তাঁদের মাকে নিয়ে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা বলেছিলেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা পাইয়ে দিন। তাঁরা বলেছিলেন, বিজেপিকে ভোট দিয়ে ভুল করেছি। খাল কেটে কুমির এনেছি।’’ অভিষেক এ-ও বললেন, ‘‘ভোট দিন ১০০ দিনের কাজের টাকা এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারকে সামনে রেখে।’’
‘‘যে কুনার হেমব্রম গত পাঁচ বছর সাংসদ থেকেছেন বিজেপির, তিনিও বলছেন, তফসিলি জনজাতিকে উপেক্ষা করেছে বিজেপি।’’ মন্তব্য অভিষেকের।
‘‘যাঁরা কুড়মি আন্দোলন করছেন, তাঁদের মুখে কখনও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান থাকতে পারে না।’’ জঙ্গলমহলে তাঁর কনভয়ে ‘হামলার’ কথা স্মরণ করিয়ে বিজেপিকে খোঁচা অভিষেকের।
অভিষেক বলেন, ‘‘৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গরমকে উপেক্ষা করে মানুষ সভায় এসেছেন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাঁদের সবাইকে।’’
এ বার কুনার হেমব্রমকে লোকসভায় টিকিট দেয়নি বিজেপি। চিকিৎসক প্রণত টুডুকে প্রার্থী করেছে পদ্মশিবির। অন্য দিকে, টিকিট না পেয়ে আগেই বিজেপি ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন বিদায়ী সাংসদ কুনার। এ বার তাঁকেই তৃণমূলে যোগদান করিয়ে বিজেপিকে ধাক্কা দিলেন অভিষেক।
মোদীর বাংলা সফরের মধ্যে বিজেপিতে ধাক্কা! ঝাড়গ্রামের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম যোগ দিলেন তৃণমূলে। রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন কুনার।
গত লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসন দখল করে নিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল সেই আসন পুনরুদ্ধার করতে দলের অন্দরের দ্বন্দ্ব মেটানোর দিকে নজর দিয়েছে। এ নিয়ে আগে বৈঠকও হয়েছে। জনসভা থেকে অভিষেক কী বার্তা দেন, সে দিকে নজর রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম আসনে এ বার সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সোরেনকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। জরুরি এবং দলের সকলের সমন্বয় রেখে কাজ করা উচিত, তা আগের বৈঠকে বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কালীপদের সমর্থনে জনসভায় অভিষেক।