—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে এ বার ভোট পড়েছে ৭৯ শতাংশ। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ভোটের হার সবচেয়ে কম আমতায়। ৭৬ শতাংশ। বাকি ছয় বিধানসভায় ভোট পড়ার হার যেখানে ঘোরাফেরা করেছে ৭৮ থেকে ৮২ শতাংশের আশপাশে, সেখানে আমতা ভাবাচ্ছে শাসকদলকে। বিরোধীরা অবশ্য এতে বিচলিত নয়। তারা মনে করছে, ভোট কম পড়ায় তাদের লাভ।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, আমতায় ভোটদানের কম হার আসলে দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের কাজে অনীহা। তাঁদের এই অনীহার কারণে দলের ভোটারদের একাংশের ভোট মেলেনি। ভোটের হার কম নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও আমতা কেন্দ্র তৃণমূল সভাপতি সেলিমুল আলম অবশ্য দাবি করেন, ‘‘প্রথম দিকে সামান্য কিছু সাংগঠনিক সমস্যা থাকলেও পরে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়াই করেছেন। আমরা এখানে খুব ভাল ফল করব।’’
সেলিমুল যা-ই দাবি করুন, এমনিতেই এই কেন্দ্রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে বারবার সামনে এসেছে। সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে দলের জেলা নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। জেলা নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে পুরোপুরি মেটানো যায়নি, তার প্রমাণ দেখা গিয়েছে নির্বাচনের দিনে। জেলা নেতৃত্বের একাংশ জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁদের সংগঠনকে যেখানে ছন্নছাড়া লেগেছে, সেখানে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস জোট। ওই সব পঞ্চায়েতের হিন্দুপ্রধান বুথগুলিতে বিজেপি ভোট করিয়েছে। সংখ্যালঘু প্রধান বুথগুলিতে দাপট দেখা গিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের। এই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন আঠারোটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে অন্তত পাঁচটিতে দেখা গিয়েছে এই প্রবণতা। এই পঞ্চায়েতগুলির সব ক’টিই আছে তৃণমূলের দখলে।
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, এখানে বাম-কংগ্রেস জোটের হাতে ছিল ছাত্রনেতা আনিস খানের অপমৃত্যুর ঘটনার মতো বিষয়। বিজেপির ছিল ধর্মের সুড়সুড়ি। তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘আনিস খানের অপমৃত্যুর ঘটনায় কিছু এলাকায় দল এমনিতেই সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশের আস্থা খুইয়েছে। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দল যেমন সফল হয়নি, তেমনই বিজেপির ধর্মের সুড়সুড়ির মোকাবিলা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করতে পারেনি। নিজেদের মতো করে তারই সুযোগ নিয়েছে বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোট।’’
বিজেপি নেতা লালন ঈশ্বর কম ভোট পড়ার কারণ হিসাবে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিতদের একটি বড় অংশ দলীয় নেতৃত্বের উপরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভোট দিতে যাননি বলে মনে করছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা আমতায় ভাল ব্যবধানে লিড নেব।’’ বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী কংগ্রেসের আজহার মল্লিকেরও দাবি, তাঁরা এই বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে যাবেন। ভোট কম পড়ার কারণ হিসেবে কংগ্রেস নেতা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন মানুষ। ছাপ্পা মেরে ভোট করার সুযোগ এ বারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপটে পায়নি তৃণমূল। ফলে, ভোটের হার তুলনামূলক ভাবে কম।’’
তৃণমূলের জেলা নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য দাবি করছেন, ভোট কম পড়া বা কয়েকটি পঞ্চায়েতে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার অর্থ এটা নয়, যে এই বিধানসভা কেন্দ্রে
বিরোধীরা এগিয়ে যাবে। এখানে তৃণমূলই এগিয়ে থাকবে। তবে, ব্যবধান খুব বেশি হবে না।