Lok Sabha Election 2024

দুই ভোটের স্মৃতি মাথায় রেখে অঙ্ক কষা দু’পক্ষে

২০১১ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে গঠিত হয় এই আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র। রাজ্যে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়েছিল তৃণমূল। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটক জিতে মন্ত্রী হন।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ০৮:২৬
Share:

দেওয়ালে দেওয়ালে ভোটের কথা। দুর্গাপুর শহরে। —নিজস্ব চিত্র।

দু’বারের অস্বস্তির কাঁটা সরিয়ে খানিক স্বস্তি মিলেছে দু’বছর আগের ভোটে। কিন্তু তা-ও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে দিচ্ছে না। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের ভোট-স্মৃতি স্মরণ
করেই বাড়তি উদ্যমী হতে হচ্ছে তৃণমূলকে। তবে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের এই এলাকা ২০২২ সালের উপনির্বাচনের মতোই তাঁদের এগিয়ে রাখবে বলে আশা দলীয় নেতৃত্বের। গেরুয়া শিবির আবার আশা করছে, ২০১৪ ও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের মতো ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হবে এ বারও।

Advertisement

২০১১ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে গঠিত হয় এই আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র। রাজ্যে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়েছিল তৃণমূল। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটক জিতে মন্ত্রী হন। তার পরের দু’টি বিধানসভা ভোটেও নিজের জয় ধরে রেখেছেন তিনি। আসানসোল পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ড রয়েছে এই কেন্দ্রে। তার মধ্যে ২৭টিই তৃণমূলের দখলে। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফল সব অঙ্ক উলটপালট করে দেয়। দু’বারই বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ২০১৪ সালের ভোটে বিজেপির চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে থাকার পরে, রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে মলয়কে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস দুয়েক পরে অবশ্য মন্ত্রিত্ব ফেরত পান মলয়। কিন্তু ২০১৯ সালের ভোটেও প্রায় ২১ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকে তৃণমূল।

গত উপনির্বাচনে তৃণমূল ভাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও, এ বার কোনও আত্মতুষ্টি দেখাচ্ছেন না দলের নেতারা। ঘনঘন কর্মী-বৈঠক, পথসভা থেকে মিছিল করছেন মন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের দাবি, আসানসোলের প্রার্থী হিসেবে যে দিন শত্রুঘ্নর নাম জানান মমতা, সে দিনই কালীঘাটে দলের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দেন, আসানসোলের সাতটি বিধানসভা থেকেই ‘লিড’ দিতে হবে। রেলপাড়ের সংখ্যালঘু ভোট নজরে রাখছে সব পক্ষই। গত পুরভোটের ফলাফলের নিরিখে সেই ভোট কতটা পক্ষে রয়েছে সে নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল। কারণ, সেখানকার ছ’টি ওয়ার্ডের চারটিই তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। দু’টি বিজেপি ও দু’টি কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। এ বার কংগ্রেসের সমর্থনে বাম প্রার্থী রয়েছেন এই কেন্দ্রে। তিনি এখান থেকে ভাল ভোট পেলে দল বেকায়দায় পড়বে বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা।

Advertisement

২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল প্রায় ১১ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিল। তা ধরে রাখতে মূলত এলাকার উন্নয়নকে হাতিয়ার করে প্রচার চলছে বলে দল সূত্রের দাবি। আইটি হাব, বিশ্বিবিদ্যালয়, জেলা শ্রম ভবন, জেলা আদালত, জেলা হাসপাতাল— এ সব সামনে রেখেই ৩২টি ওয়ার্ডে প্রচার সারছেন মন্ত্রী। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলের বলিষ্ঠ নেতা এই এলাকার বিধায়ক। তাঁর নেতৃত্বে এ বার আমরা লিড পাবই।’’

গত দু’টি লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপি বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও, এ বার পরিস্থিতি তত সহজ নয়, এ কথা একান্তে স্বীকার করেছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। গত বিধানসভা ভোটের হারের ক্ষত এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি। তবে দলের জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রেলপাড় অঞ্চলে অনুন্নয়ন ও গারুই নদের বিপর্যয় এলাকায় বড় প্রশ্ন। তার উপরে রাজ্যে লাগামছাড়া দুর্নীতিকে হাতিয়ার করেই এ বার ফের এই কেন্দ্রে লিড পাব।’’ প্রচারে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে ইডি-সিবিআই হানার প্রসঙ্গও তুলছে বিজেপি। বাপ্পার আরও দাবি, গত বিধানসভা ও পুরভোটে মানুষকে বুথ পর্যন্ত যেতে দেয়নি তৃণমূল। এ বার তা হচ্ছে না।

এলাকায় জোরকদমে প্রচার সেরেছেন বাম প্রার্থী জাহানারা খানও। এ বার এখান থেকে ভাল ভোট পাওয়ার আশা করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তবে বিজেপির আশা, বাম প্রার্থী তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাচ্ছে। ফলে, তার সুফল তাদের ঘরে উঠবে।

কোন অঙ্ক কাজ করল, জানা যাবে ৪ জুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement