পাপুড়িতে তৃণমূলের বিজয় মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার ভোট হয়েছে। আরও তিন দফার নির্বাচন বাকি আছে। তার পরে ফল ঘোষণা। এর মধ্যেই মঙ্গলবার নানুরের পাপুড়িতে জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল করল তৃণমূল। ওই মিছিলে হাজির ছিলেন এলাকার বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি, দলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেও।
প্রসঙ্গত, নানুরে বাম আমল থেকেই প্রতিটি ভোটেই সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠত। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও সেই ‘ধারাবাহিকতা’ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও নানুরের অধিকাংশ আসনে বিরোধীরা কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি। হাতে গোনা যে কয়েকটি আসনে ভোট হয়েছিল, তাতেও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা।
কর্মীদের জন্য মজুত মিষ্টি। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার লোকসভা ভোটেও বহু বুথে এজেন্টদের মারধর থেকে শুরু করে ছাপ্পা দেওয়ার একাধিক অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তার পরে এ দিনের বিজয় মিছিল তাদের অভিযোগকে মান্যতা দিল বলে মনে করছে বিরোধীরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিন বিজয় মিছিলের জন্য এলাহি আয়োজন করা হয়। কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে বিলি করার জন্য বিভিন্ন দোকান থেকে অর্ডার দিয়ে বিপুল পরিমাণ নানা ধরনের মিষ্টি নিয়ে আসা হয়। সবুজ আবির থেকে ঢাকের বাজনাও— বাদ যায়নি কিছুই।
ওই মিছিলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘নানুরের সন্ত্রাস করে একতরফা ভোট করেছে তৃণমূল। ওরা ধরে নিয়েছে বাকি জায়গাগুলিতেও এক কায়দায় ভোট হয়েছে। সেই ধারণা থেকেই হয়তো ফল ঘোষণারই আগেই মিছিল করেছে।’’ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলও একই সুরে বলেন, ‘‘টুকলি করে পরীক্ষা দিলে ফল কেমন হতে পারে তা আগে থেকে আন্দাজ করা যায়।’’ পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘নির্বাচন চলাকালীন বুথফেরত সমীক্ষা নিষিদ্ধ হয়। তা হলে কি বিজয়মিছিল করা যায়? আইনবিরুদ্ধ হলে আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হব।’’ যদিও এখনও পর্যন্ত নানুরের কোনও বুথে পুনর্নিবাচন দাবি করেনি বিরোধীরা। মিছিল শেষে কাজল বলেন, ‘‘আমরা ৩৬৫ দিন পড়াশোনা করেছি। তাই ফল কেমন হবে তা অনুমান করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই প্রথম নানুরে হানাহানি, রক্তপাত ছাড়া শান্তিতে ভোট হয়েছে। তাই পাপুড়ির মানুষ আবেগ আর উচ্ছ্বাসে বিজয় মিছিলের আয়োজন করেছেন। আমরা তাতে পা মিলিয়েছি।’’ তবে বিজয়মিছিল নিয়ে তৃণমূলের একাংশও দ্বিমত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা কোর কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘ফল ঘোষণার আগে বিজয় মিছিল করাটা আমাদের দলের নীতিবিরুদ্ধ। দলনেত্রীর নির্দেশ ছাড়া বিজয় মিছিল করাও যায় না।’’ দলের জেলা সহসভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ধরনের কোনও নির্দেশ এসেছে কি না জানা নেই।’’