অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটেই আভাস মিলেছিল। লোকসভা ভোটেও সেই পথে হেঁটে জঙ্গলমহলের বেশ কিছু আসনে ফুটল জোড়াফুল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের সিংহভাগ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। একমাত্র ঘাটাল লোকসভা আসনে চিত্রতারকা দেব জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের তরফে। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ইভিএম খুলতেই ধাক্কা খায় বিজেপি। বাঁকুড়া লোকসভা আসনে বিদায়ী সরকারের প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার প্রথম রাউন্ড থেকেই পিছতে শুরু করেন। বিজেপি নেতৃত্বের আশা ছিল, রাউন্ডের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো লড়াইয়ে ফিরবেন সুভাষ। কিন্তু ভোট গণনাপর্ব যত এগিয়েছে, ততই তলিয়ে গিয়েছেন তিনি। এ বার বাঁকুড়ায় তৃণমূল প্রার্থী করেছিল জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তীকে। তাঁর কাছে হার মানতে হয়েছে বিজেপির চিকিৎসক প্রার্থীকে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে বাঁকুড়া আসনে তৃণমূল বিজেপির থেকে ১৭,৪৯৯ ভোটে এগিয়ে ছিল।
তবে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর লোকসভায় লড়াই ছিল দুই ‘প্রাক্তন’-এর। বিজেপির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তাঁর বিপরীতে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। যিনি আবার সৌমিত্রর প্রাক্তন স্ত্রী। এই লড়াইয়ে জিতে তৃতীয় বারের জন্য সংসদে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন বিষ্ণুপুরের তিন বারের বিজেপি সাংসদ। যদিও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় অনেক কম ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই আসনে বিজেপি তৃণমূলের থেকে ২৮ হাজার ৭০৯ ভোটে এগিয়ে ছিল। এ বারের লোকসভা ভোটে আদিবাসী সমাজের ভোটের উপর ভরসা ছিল বিজেপির। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তাই নতুন আদিবাসী চিকিৎসক প্রণত টুডুকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ঝাড়গ্রামের বিদায়ী সাংসদ বিজেপির কুণার হেমব্রম তৃণমূলে যোগদান করায় এই আসনে ধাক্কা খায় বিজেপি। যদিও বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম লোকসভার অধীনে কোনও কেন্দ্রেই জিততে পারেনি বিজেপি। তাই স্বাভাবিক কারণেই এই আসনে বিজেপির হার প্রত্যাশিত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিধানসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল এই আসনে বিজেপির থেকে এক লক্ষ ৮৬ হাজার ৩০৩ ভোটে এগিয়ে ছিল।
মেদিনীপুর আসনের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করে পাঠানো হয়েছিল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে। বদলে মেদিনীপুর লোকসভায় প্রার্থী করা হয়েছিল আসানসোল দক্ষিণের বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। কিন্তু মেদিনীপুরের অভিনেত্রী বিধায়ক জুন মালিয়ার কাছে হার মানতে হয়েছে তাঁকে। যদিও, বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভার অধীন মাত্র একটি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। সেখানে বিজেপির থেকে তৃণমূল ৯৩ হাজার ৯১৬ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিল। খড়্গপুর সদর আসনে বিজেপির পক্ষে জিতেছিলেন অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে তিনিও ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। তবে দু’বারের সাংসদ জনপ্রিয় অভিনেতা দেবের কাছে হার মানতে হয়েছে তাঁকেও। বিধানসভা ভোটের নিরিখে ঘাটাল আসনে বিজেপির থেকে তৃণমূল ৮৩ হাজার ১৮১ ভোটে এগিয়েছিল।
আবার পুরুলিয়া আসনে কোনওক্রমে জয় পেয়ে গিয়েছেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। গত বিধানসভা ভোটে মাত্র ১,৫৫০ ভোটে বিজেপি এগিয়ে ছিল তৃণমূলের থেকে।