Lok Sabha Election 2024

তৃণমূল প্রার্থীতে জনজাতি-কুড়মি ভারসাম্য, তবু প্রশ্ন

জঙ্গলমহলের দু’টি লোকসভা আসন পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামেই মূলত জনজাতি, কুড়মিদের আধিক্য। তবে পুরুলিয়া আসনটি অসংরক্ষিত, আর ঝাড়গ্রাম জনজাতি সংরক্ষিত আসন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত , প্রশান্ত পাল 

ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

তাঁর সাম্প্রতিক জঙ্গলমহল সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বার বারই শোনা গিয়েছে কুড়মি ও জনজাতি ঐক্যের বার্তা। লোকসভা ভোটের প্রার্থী নির্বাচনেও সেই ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে রাজ্যের শাসকদল। সেই অঙ্কেই পুরুলিয়ায় কুড়মি প্রার্থী, ঝাড়গ্রামে সাঁওতাল। তবু প্রশ্ন থাকছেই।

Advertisement

জঙ্গলমহলের দু’টি লোকসভা আসন পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামেই মূলত জনজাতি, কুড়মিদের আধিক্য। তবে পুরুলিয়া আসনটি অসংরক্ষিত, আর ঝাড়গ্রাম জনজাতি সংরক্ষিত আসন। তৃণমূল ঝাড়গ্রামে জনজাতি এবং পুরুলিয়ায় কুড়মি প্রার্থী দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা।

যে জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মিদের লড়াই, সেই কুড়মি সমাজও ঝাড়গ্রামে জনজাতি প্রার্থী দিতেই বাধ্য হয়েছে। কারণ, কুড়মিরা অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি (ওবিসি)-র মধ্যে পড়ে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তারা যে দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তাদের পদবি মাহাতো। কিন্তু তাঁদের তফসিলি জনজাতির শংসাপত্র রয়েছে। আর পুরুলিয়ায় কুড়মি সমাজের প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো।

Advertisement

২০১৯-এর নির্বাচনে অবশ্য পুরুলিয়ায় কুড়মি প্রার্থী দিয়েও হেরেছিল তৃণমূল। জিতেছিলেন বিজেপির কুড়মি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের সাঁওতাল প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন বিজেপির কুনার হেমব্রম। তিনিও সাঁওতাল জনজাতির প্রতিনিধি। এ বারে ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের প্রার্থী সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেন, যিনি পাঠক মহলে খেরওয়াল সরেন নামে পরিচিত। পুরুলিয়ায় প্রার্থী, প্রাক্তন মন্ত্রী কুড়মি সম্প্রদায়ের শান্তিরাম মাহাতো।

সাম্প্রতিক জনজাতি-কুড়মি দ্বন্দ্বের আবহে ঝাড়গ্রামে সাঁওতাল প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছে তৃণমূলেরই একাংশ। কারণ, কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির বিরোধিতায় পথে নেমেছে সাঁওতাল সংগঠন। ফলে, সাঁওতাল প্রার্থী কতটা কুড়মি ভোট পাবেন, সংশয় থাকছে। তা ছাড়া, সাঁওতালের পরিবর্তে মুন্ডা, ভূমিজ, কোড়া-র মতো অন্য জনজাতির কাউকে প্রার্থী করা যেত বলেও অনেকের মত।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী ঝাড়গ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯.৩৭ শতাংশ জনজাতি। তার মধ্যে সাঁওতালভাষী প্রায় ৮০ শতাংশ। আর মোট জনসংখ্যার ২০.১১ শতাংশ তফসিলি জাতি এবং ২৩.২৭ শতাংশ কুড়মি। অর্থাৎ জনজাতি ও কুড়মিদের সংখ্যাটা প্রায় সমান সমান। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথীর দাবি, ‘‘তৃণমূল নেত্রী গোড়া থেকেই ভাগাভাগির রাজনীতি করছেন। তাই ওরা জনজাতি, তফসিলি, কুড়মি ভোটের ভাগাভাগি নিয়ে চিন্তিত।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু যদিও বলছেন, ‘‘কুড়মি প্রার্থীতে আমাদের লাভই হবে।’’

তৃণমূল শিবিরের আরও যুক্তি, জেলার সাড়ে তিন লক্ষ পরিবারের কেউ না কেউ কোনও না কোনও সরকারি পরিষেবার উপভোক্তা। লক্ষ্মীর ভান্ডারে উপকৃত ২ লক্ষ ৮১ হাজার মহিলা। ফলে, উপভোক্তা ভোটে জাতিগত বিভাজন প্রভাব ফেলবে না। তবে ঝাড়গ্রামে কুড়মি সমাজ নির্দলে জনজাতি প্রার্থীকে দাঁড় করালে কুড়মি ভোট কী ভাবে ভাগ হবে, সেটাই দেখার।

পুরুলিয়ায় প্রায় ২৮ শতাংশ কুড়মি ভোটার রয়েছেন। আদিবাসী ভোটার ১৮.৪ শতাংশ। তফসিলি জাতি ১৮.৫ শতাংশ, সংখ্যালঘু ৬.৮ শতাংশ, মাহাতো বাদ দিয়ে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি (ওবিসি) আছে ১৬.১৫ শতাংশ। আর সাধারণ ভোটার ১২.০৫ শতাংশ। ফলে, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ কুড়মিদের মধ্যে থেকে প্রার্থী করার অঙ্কটা স্পষ্ট। পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোর অবশ্য দাবি, ‘‘সমস্ত কুড়মি নন, কেবল কুড়মিদের একটি সংগঠন ভোটে প্রার্থী দিতে চায়। তাতে বিজেপির ভোটে প্রভাব পড়বে না।’’ তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর যুক্তি, ‘‘জাতিসত্তার দাবির আন্দোলনের মঞ্চ ওটা। তবে ভোট হচ্ছে রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে। ফলে জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement