বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক। —ফাইল চিত্র ।
লোকসভা ভোটের প্রথম দফার ঠিক আগের রাতে কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাল তৃণমূল। কোচবিহারে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ, বাড়িতে অস্ত্র মজুত করা এবং দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়া— এই তিনটি বিষয়ে নিশীথের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে।
যে চিঠি কমিশনকে দেওয়া হয়েছে তাতে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় কোচবিহারে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন নিশীথ। কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল তাঁর এবং বিজেপির পক্ষে নিয়ে যেতে সব রকম চেষ্টা করছেন তিনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী যে হেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় পড়ে এবং নিশীথ প্রতিমন্ত্রী, তাই তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিজের সুবিধা মতো মোতায়েন করতে চাইছেন। এর আগে যাঁরা স্ট্রংরুম (যেখানে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট সংরক্ষিত রয়েছে)-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের সরিয়ে সম্প্রতি নতুন নির্দেশ জারি করে সিআরপিএফ জওয়ানদের সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, এর ফলে, স্ট্রংরুমে কারও যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন নিশীথ। যার ফলে অন্য দলের প্রার্থীদের তুলনায় তাঁর সুবিধাই হবে।
চিঠিতে তৃণমূল আরও অভিযোগ করেছে, সম্প্রতি তাদের নজরে এসেছে নিশীথ তাঁর বাড়িতে দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিয়েছেন। যাঁরা তাঁর বাড়িতে রয়েছেন তাঁরা কেউই কোচবিহারের ভোটার নন। অভিযোগ, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের দিন তাঁদের ব্যবহার করবেন নিশীথ। এ ছাড়াও তৃণমূল অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে নিশীথ তাঁর বাসভবনে অস্ত্রও মজুত করছেন। ভোটের দিন ওই অস্ত্র দিয়ে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে ভোট দিতে বাধ্য করবেন। নিশীথের বাড়িতে আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপির বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ এনেছেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। তাঁর অভিযোগ, ভোটের আগের দিন দিনহাটার বেশ কিছু এলাকায় দুষ্কৃতীদের এনে জড়ো করে রেখেছে বিজেপি। বিএসএফ অফিসারদের সই করা ফর্ম নির্দিষ্ট বুথের প্রিসাইটিং অফিসারদেরকে দিয়ে জোর করে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
কমিশনের কাছে তৃণমূলের আবেদন, নিশীথের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হোক। এর পাশাপাশি যে সকল দৃষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁদের গ্রেফাতারির নির্দেশ দিতেও কমিশনকে অনুরোধ করেছে তৃণমূল। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে জওয়ানদের কোচবিহারের মোতায়েন করা হয়েছে তাঁদের পরিবর্তে অন্য রাজ্য থেকে বাহিনী আনার অনুরোধও করেছে তৃণমূল।
নিশীথের বাড়িতে অস্ত্র মজুত করার বিষয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেস এ বার জিততে চলেছে। বিজেপি হারছে এবং সেটা বুঝতে পেরেই শেষ মুহূর্তে আপত্তিকর কাজ করছেন বিজেপি প্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে এবং অবিলম্বে কমিশনকে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানানো হয়েছে।”
পাল্টা নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, “কোচবিহারে তৃণমূল যে আবার হারতে চলেছে তা তৃণমূলের এই ভয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর কোনও সারবত্তা নেই। আগাম হার জানতে পেরেই নানা অজুহাত খাড়া করছে তৃণমূল। আমাদের প্রার্থী গত বারের তুলনায় তিন গুণ বেশি ভোটে জয়ী হবেন কোচবিহার আসন থেকে।”