Opposition Alliance INDIA

রাহুলের চিঠিতেও ভিজছে না চিঁড়ে! রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নিতে চায় তৃণমূল

কংগ্রেসকে দু’টি আসন (বহরমপুর এবং দক্ষিণ মালদহ, যেখানে তারা উনিশের লোকসভায় জিতেছিল) দেওয়া তো দূরস্থান, সেখানে একলাই কোমর বেঁধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০০
Share:

কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে লড়াইয়ের পরিকল্পনা তৃণমূলের। —ফাইল চিত্র।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া অর্থ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন। কিন্তু সূত্রের খবর, তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। রাহুলের চিঠিকে গুরুত্বই দিতে চাইছে না তৃণমূল।

Advertisement

কংগ্রেসকে দু’টি আসন (বহরমপুর এবং দক্ষিণ মালদহ, যেখানে তারা উনিশের লোকসভায় জিতেছিল) দেওয়া তো দূরস্থান, সেখানে একলাই কোমর বেঁধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। চেষ্টা করা হচ্ছে এই দুই আসনে সংখ্যালঘু ভোটকে তৃণমূলের ছাতার তলায় সুসংহত করতে। এক কথায়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়েই লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা এখনও রয়েছে তৃণমূলের। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরির জন্যও এমন কৌশল নেওয়া হতে পারে।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই দুই আসনে তৃণমূল আদাজল খেয়ে লড়লে বিজেপি-রই সুবিধা হবে। গত লোকসভা ভোটেও পৃথক ভাবে লড়েছিল কংগ্রেস এবং তৃণমূল। হিসেব দেখাচ্ছে, সে বারের বহরমপুরে ৪৫.৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। তৃণমূল পেয়েছিল ৩৯.২ শতাংশ। বিজেপি পায় ১০.৯ শতাংশ। অন্য দিকে দক্ষিণ মালদহের আসনে কংগ্রেস প্রার্থী জেতেন ৩৪.৭১ শতাংশ ভোট পেয়ে। সেখানে বিজেপি পায় ৩৪.০৭ শতাংশ। তৃণমূল দক্ষিণ মালদহে পায় ২৭.৪৫ শতাংশ ভোট। রাজনৈতিক মহলের মতে, কংগ্রেসের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের যদি ভাগাভাগি হয়, অনিবার্য ভাবেই সুবিধা পেয়ে যাবে বিজেপি।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের দাবি, পুরো দোষ কংগ্রেসের। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের গোড়া থেকেই আসন বণ্টনের সময়সীমা ধার্য করার জন্য বলে এসেছে তৃণমূল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতা বা নেত্রী। যা কথা হয়েছে তা অন্য নেতাদের মারফত। অন্য দিকে এখনও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, তারা মমতার দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করে চলেছে।

তৃণমূলের আজ পাল্টা জবাব, কংগ্রেস এই কথাগুলি বলছে এই বার্তা দেওয়ার জন্যই যে পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোট কার্যকর না হওয়ার দায় যেন তাদের গায়ে না লাগে। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, এক দিকে ‘চেষ্টার’ কথা বলা, অন্য দিকে লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীকে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল সরকারকে চূড়ান্ত অপদস্থ করার কাজটিও কংগ্রেস চালিয়ে গিয়েছে। এক শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে দেখছে অধীর চৌধুরীর চোখে। এটা মেনে নিতে পারি না।” তৃণমূল সূত্রের দাবি, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে রাহুল গান্ধীর উপর। অভিযোগ, তাঁদের ‘যোগসাজশে’র ফলে জোটের তারিখ স্থির করা নিয়ে টালবাহানা করা হয়।

সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনেও কংগ্রেস তৃণমূলের এই মনান্তর চোখে পড়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মল্লিকার্জুন খড়্গের সংসদীয় অফিসে ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যদের ডাকা হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণ যে শুধু তৃণমূলই প্রত্যাখ্যান করেছে তাই-ই নয়, যায়নি ‘ইন্ডিয়া’র ভিতরে ‘জিঞ্জার’ গোষ্ঠী তথা এসপি, আপ-ও।

আজ কংগ্রেস সূত্রের পাল্টা বক্তব্য, এই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ সবার। এখানে কে কাকে আগে ফোন করল বা যোগাযোগ করল, তার জন্য বসে না থেকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই অগ্রণী হয়ে রাজ্যের জোটের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারতেন কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে। এখন তিনি যা করছেন, তাতে বিজেপি-র হাতই সেই রাজ্যে শক্ত হচ্ছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। পাশাপাশি অবশ্য এ কথা আজও জানানো হয়েছে যে এখনও কংগ্রেসের তরফ থেকে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আসন সমঝোতা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তৃণমূল অবশ্য এই দাবি আজও উড়িয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement