প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র ।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! তেমনটাই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। রবিবার অন্ধ্রপ্রদেশের পালনাডুর চিলাকালুরিপেটে একটি নির্বাচনী সমাবেশে যান মোদী। তৃণমূলের অভিযোগ, মোদী ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে। আর তা নিয়েই নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ জানাল তৃণমূল। তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ জানিয়েছেন দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে। যদিও রাজ্য বিজেপির কোনও নেতা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। তাঁদের বক্তব্য বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই মন্তব্য করবেন এবং বিষয়টি ভুল না ঠিক, তার বিচার করবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের প্রচারের জন্য সরকারি পরিবহণ, যন্ত্র বা নিরাপত্তারক্ষী ব্যবহার করা যাবে না। তাই তৃণমূলের দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন মোদী। তৃণমূল এ-ও দাবি করেছে, মোদী যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, সেই একই বিধি লঙ্ঘনের জন্য ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল।
তৃণমূল জানিয়েছে, নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের সময় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, আসন্ন লোকসভা ভোটে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনী প্রচারের জন্য বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে, প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসকদল।
তৃণমূল দাবি করেছে, যদি বিজেপি ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ভাড়াও নিয়ে থাকে, তা হলে তা কেন নেওয়া হয়েছে— তার উত্তর নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। কেন নির্বাচনী প্রচারের জন্য একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা অন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছে তৃণমূল।
তৃণমূল যে মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে, সেই বিষয়টি ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডলে জানিয়েছেন সাকেত। মোদীর সঙ্গে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি ছবিও পোস্ট করেছেন তৃণমূল সাংসদ। সাকেত লিখেছেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রবিবার অন্ধ্রপ্রদেশের পালনাডুর চিলাকালুরিপেটে একটি নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন মোদী। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচারের জন্য সরকারি পরিবহণ ব্যবহার করা যায় না।... দেখা যাক নির্বাচনী প্রচারে বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে কি না বা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে কি না।’’
উল্লেখ্য, শনিবার ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বারের লোকসভা ভোট হবে সাত দফায়। প্রথম দফার ভোট ১৯ এপ্রিল। সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটগণনা। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার সঙ্গেই সারা দেশে চালু হয়ে গিয়েছে নির্বাচনী আচরণ বিধি। তার পর থেকেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ভোটে অর্থের লেনদেন রুখতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন, কোনও নেতা বা নেত্রী যদি কোথাও চার্টার্ড বিমান বা চপার নিয়ে প্রচারে যান, প্রয়োজনে পুলিশ বা বাহিনী সেখানেও তল্লাশি চালাতে পারে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকাগুলিতে নজরদারির জন্য ‘ড্রোন’ উড়বে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই আবহেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সরব তৃণমূল।