সাইকেলে ভোটপ্রচার মহম্মদ সেলিমের। —নিজস্ব চিত্র।
পরনে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি এবং সাদা পাজামা। পায়ে কালো স্নিকার্স। কাঁধে সাদা উত্তরীয়তে আঁকা কাস্তে- হাতুড়ি। মুখে সেই চেনা হাসি। সদ্য নির্মীয়মাণ পিচরাস্তা ধরে সাইকেল চালিয়ে ভোটের প্রচার করছেন মুর্শিদাবাদের বাম প্রার্থী সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এক হাতে সাইকেলের একটি হ্যান্ডল, রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো জনতার উদ্দেশে অন্য হাত নাড়লেন। সেই দৃশ্য মোবাইলের ক্যামেরাবন্দি করলেন সিপিএমের যুবকর্মীরা।
২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কটাক্ষ শুরু করেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বামেদের সর্বহারা তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সেলিম সাইকেলে ভোটের প্রচার করছেন, ভাল কথা। কিন্তু যে সাইকেলটি চালিয়ে তিনি প্রচার করছেন, সেটা রাজ্য সরকারের তরফে পড়ুয়াদের দেওয়া ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল। শাসকদলের কটাক্ষ, ‘‘আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এবং লোকসভার প্রার্থী।’’ আর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের খোঁচা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা-ই বলুন, বাংলাতেও ‘ইন্ডিয়া’ সফল। তবে কাজে আসবে না।’’ তবে সিপিএম বিষয়টি দেখছে অন্য ভাবে। স্বয়ং সেলিম বলছেন, ‘‘ওটা টেস্ট ড্রাইভ ছিল।’’
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডোমকল বিধানসভার বাজার এলাকায় সোমবার ভোট প্রচার করছিলেন কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী সেলিম। সেখানে বেশ কিছুটা পথ সাইকেল চালিয়ে ভোটপ্রচার সারেন তিনি। ওই সূত্রের দাবি, ডোমকল এলাকার এক বামকর্মীর কাছ থেকে ওই সাইকেলটি জোগাড় করে দেন স্থানীয় নেতারা। সেই বামকর্মীর মেয়ে স্কুলছাত্রী। রাজ্য সরকারের সবুজ সাথী প্রকল্পে ওই সাইকেলটি পেয়েছে সে। উৎসাহী বামকর্মীরা যখন সেলিমের সাইকেল চালানোর ভিডিয়ো দিয়ে ফলাও করে প্রচার করছেন, তখন পাল্টা কটাক্ষ ছুড়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বামেদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে সেলিমের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিয়োর ক্যাপশন মোটামুটি এক— ‘সর্বহারাদের প্রতিনিধি মহম্মদ সেলিম ভোটপ্রচারে।’ কিন্তু ওই ভিডিয়ো দিয়ে সমাজমাধ্যমের পাতায় তৃণমূলও পাল্টা দাবি করেছে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাইকেলে মহম্মদ সেলিম।’
বিষয়টি নিয়ে নেটাগরিকরা আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। এ নিয়ে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব বলছেন, ‘‘সেলিম সাহেবকে ধন্যবাদ যে তিনি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার করছেন।’’ যদিও বিষয়টি এ ভাবে দেখতে নারাজ সিপিএম। মুর্শিদাবাদের বাম যুবনেতা সন্দীপন দাসের দাবি, ‘‘সরকার আর দল এক নয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সরকারি প্রকল্পে কখনও দলীয় অংশীদারিত্ব থাকে না। আসলে এই প্রকল্পের সাইকেল যে কতটা চলার অযোগ্য, আমাদের নেতা সেটা পরখ করে দেখলেন।’’ আর এই বিতর্কে সেলিমের সংযোজন, ‘‘"ওরা মনে করে ওই সাইকেল দলের (তৃণমূলের) প্রোডাক্ট। কিন্তু, ওগুলো আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেনা।’’