নির্বাচনে জেতার পরে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
সাদা প্যাডের পাতায় কখনও লিখছিলেন নিজের নাম। কখনও আবার আঁকছিলেন ফুল-নকশা। তবে কয়েকটি রাউন্ডে সাপ-লুডোর মতো ভোট ওঠানামা করলেও, বরাহনগর বিধানসভার উপনির্বাচনে জোড়া ফুলের প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি জিতব, বিশ্বাস আছে।’’ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত এমন ভাবেই গণনা কক্ষ আগলে প্রহর গুনেছেন অভিনেত্রী প্রার্থী। যদিও তাঁর প্রতিপক্ষ শিবিরের দুই প্রার্থীই তখন অন্যত্র বসে জল মেপেছেন।
সময় যত গড়িয়েছে, পানিহাটির গুরু নানক ডেন্টাল কলেজের বাইরে বিটি রোডে তৃণমূলের অস্থায়ী ক্যাম্পে ততই উল্লাস এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জোর বেড়েছে। সবুজ আবির মাখা এক কর্মী বললেন, ‘‘সৌগতদা প্রায় ৪০ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন, খবর এসেছে। আর আটকানো যাবে না। এই হাওয়ায় সায়ন্তিকাও জিতবেন।’’ এ দিন পানিহাটির ওই কলেজেই দমদম লোকসভা কেন্দ্রেরও গণনা হয়েছে। বিটি রোডের এক দিকে যখন সবুজ আবির উড়ছে, অদূরে চায়ের দোকানে বসে ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে এক প্রবীণ বাম কর্মী বলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের ভোট হয়েছে। মানুষ তৃণমূলকে লড়াইয়ের মুখ হিসাবে বেছে নিয়েছে।’’
এ দিন সকাল ৮টায় গণনা শুরুর সময়েই পানিহাটির ওই কলেজে চলে আসেন দমদম লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়। প্রতিটি গণনা কক্ষে গিয়ে খোঁজ নেন, কোথায় কত ভোটে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। বেশ কিছু ক্ষণ সেখানে কাটিয়ে ওই কলেজেরই অতিথি নিবাসে গিয়ে টেলিভিশনে চোখ রাখেন সৌগত। তিনি জয়ী হচ্ছেন, তত ক্ষণে এমন হাওয়া তৈরি হলেও সায়ন্তিকার পক্ষের হাওয়া অনুকূল ছিল না। কারণ, প্রথম দু’রাউন্ডের শেষে খবর আসে, ১২৭ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির সজল ঘোষ। তখনই ভোট কেন্দ্রে ঢোকার সময়ে সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘সবে তো শুরু। প্রথম থেকেই যদি আমি এগিয়ে থাকি, তা হলে অন্যেরা তো হতাশ হয়ে পড়বেন। তাঁরাও একটু আনন্দ করুন। কিন্তু, দিনের শেষের আনন্দ তো আমরাই করব।’’ এর পরে বেশ কিছু ক্ষণ গণনা কক্ষে কাটিয়ে অল্প সময়ের জন্য বেরোলেও ফিরে এসে ভোট কক্ষের ভিতরেই ঠায় বসে থাকেন সায়ন্তিকা।
সকালে শুরুর দিকে দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী ও বরাহনগরের প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য গণনা কেন্দ্র ঘুরে যান। সজল অবশ্য এক বারও আসেননি। তবে তাঁর প্রতিনিধি কৌস্তভ বাগচী সারাক্ষণ উপনির্বাচনের গণনা কক্ষে ছিলেন। মাঝে গণনা কেন্দ্রে দমদমের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত এলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। অন্য দিকে, বেলা যত বেড়েছে, সৌগত রায়ের জয় ততই নিশ্চিত হয়েছে। সঙ্গে জয়ের ব্যবধান কত হচ্ছে, তার আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। আচমকা জানা যায়, চতুর্থ ও পঞ্চম রাউন্ডে সামান্য ভোটে পিছিয়ে গিয়েছেন সায়ন্তিকা। যদিও আত্মবিশ্বাস টলতে দেননি দ্বিতীয় বার ভোট-যুদ্ধের ময়দানে নামা প্রার্থী। এর পর থেকে আর তিনি পিছিয়েও পড়েননি।
অন্য দিকে, সারা দিন কার্যত অতিথি নিবাসেই সময় কাটানো সৌগতের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন মন্ত্রী, বিধায়কেরা। জোড়া ফুলের জোড়া প্রার্থীর জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, জয়োল্লাসে পানিহাটিতে বিটি রোডের ডানলপমুখী রাস্তার একাংশ তখন অবরুদ্ধ। কর্মীরা বললেন, ‘‘এটুকু তো করবই!’’