পুরনো সেই দিনের কথা: লকেট চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় এবং রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিক থেকে)। —ফাইল চিত্র।
চলচ্চিত্র দুনিয়ায় দুই বন্ধু ভোটের ময়দানে যুযুধান দুই পক্ষ। হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায় দু’জনেই একে অপরের উদ্দেশে নিয়মিত আক্রমণ শানাচ্ছেন। তবে বুধবার যেন খানিক ‘যুদ্ধবিরতি’। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই ভোটের প্রচারে তুলে ধরলেন পুরনো বন্ধুত্বের কথা। স্মৃতিমেদুর রচনা বললেন, ‘‘লকেটের সঙ্গে অনেক ভাল স্মৃতি আছে। আমি সেই ভাবেই লকেটকে দেখতে চাই।’’ পাল্টা লকেটের বার্তা, ‘‘রাজনীতিতে ব্যক্তিগত সম্পর্কের আঁচ যেন না পড়ে। আমাদের সম্পর্ক যেন ভাল থাকে।’’ তিনি এ-ও জানালেন, শুটিংয়ের সেটে তিনি রচনাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতেন এবং রচনা তাঁকে ‘তুই’ বলতেন। এমনই ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁদের। তার পরেও রাজনীতিতে সিনিয়র লকেট রচনাকে মনে করিয়ে দেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করা অনেক কঠিন।’’
বুধবার হুগলির চুঁচুড়াতেই তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থী প্রচার করেন। সেখানে রচনা লকেট সম্পর্কে বলেন, ‘‘দু’জনে এত ভাল ভাল ছবি করেছি! এখনও যদি আমি আর লকেট সামনাসামনি বসি, সারা রাত কেটে গেলেও আমাদের কথা শেষ হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা যখন সিনেমা করতাম, আমাদের ‘বন্ডিং’ ভীষণ ‘স্ট্রং’ ছিল। আমরা যখন অনেক দিন ধরে ছবি করতাম, আউটডোর শুটিং থাকত, আমরা পাঁচ-ছ’জন শিল্পী—আমি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, লাবনী সরকার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রঞ্জিত মল্লিক একটা গ্রুপ ছিলাম। শুটিংয়ের পরে আড্ডা জমত।’’ কেমন হত সেই আড্ডা? রচনা বলেন, ‘‘হয়তো প্রসেনজিৎ হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে, লকেট গান করছে এবং আমি তবলা বাজাচ্ছি— এ রকম কত হয়েছে। সেই স্মৃতিগুলো ছিল খুব ভাল। আমি সেই স্মৃতি নিয়েই লকেটকে আমার কাছে রাখতে চাই।’’
রচনার এই মন্তব্যের পর লকেটও বলেন, ‘‘রাজনীতির বাইরে আমার যে ক’জন বন্ধু আছে, তাঁদের কাছে সাংসদ নই, শুধুই লকেট। আমাদের অনেক সময় হাসি মজার কথা হত। কোনটা ভুল করে কিছু বলে ফেলেছি, সেটা নিয়ে খুব মজা হত। বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ) তো বলে, ‘সেই লকেট এখন এই!’ আসলে আমি আমার পরিচয়টা সে রকম সাধারণ হিসাবে রাখতে চাই।’’ লকেটের সংযোজন, ‘‘আমি আজ সাংসদ আছি, কাল কী হবে জানি না। ১০ বছর অভিনয়ের জায়গাটা ছেড়ে এসেছি। তাই যোগাযোগটা হয়ত কিছুটা কমে গিয়েছে। কিন্তু স্মৃতিটা রয়ে গিয়েছে। আমি চাই, রাজনীতিতে ব্যক্তিগত সম্পর্কের আঁচ যেন না পড়ে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন আমাদের ভাল থাকে।’’
ভোটের ময়দানে পরস্পর পরস্পরকে তুলোধনা করলেও লকেট বলেন, ‘‘রাজনীতি মানে তো কাউকে গালিগালাজ করা নয়, কারও ভুল ধরিয়ে দেওয়া নয়। আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং যে যার বিচারধারা নিয়ে সেই কাজ করছি। আমার মনে হয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নরেন্দ্র মোদীর বিচারধারা রয়েছে। ওঁর মনে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা।’’