আবু তাহের খান। —ফাইল চিত্র।
ভোটের পরে মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের বেশ কয়েক জন বলিষ্ঠ নেতা ও কর্মীকে দলবিরোধী কাজের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ সহ দল থেকে বহিষ্কার করার কথা জানিয়ে দিলেন মুর্শিদাবাদের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের প্রার্থী আবু তাহের খান।
ভগবানগোলা বিধানসভার উপনির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে তৃণমূলে। ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করে বিদায়ী সাংসদ আবু তাহের খান দলীয় কর্মীদের সতর্ক বার্তা দিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এ বারেও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন আবু তাহের। বিধানসভায় অন্তর্ঘাত হলে তাঁর ক্ষেত্রেও যে তার প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে অন্তর্ঘাতের কথা স্বীকার করলেও দলের এই সব বিশ্বাসঘাতক কারা, তাহের তাঁদের নাম করেননি।
আবু তাহের খান বলেন, “যারা দলে থেকে দলের সঙ্গে গদ্দারি করছে, দলে থেকে দলের বিরোধিতা করছে, দলের ক্ষতি হয় এমন কাজ করছে, আমরা তাদের চিহ্নিতকরণ করছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন যারা দলে থেকে দলের সঙ্গে বেইমানি করছে, বিশ্বাসঘাতকতা করছে, দলবিরোধী কাজকর্ম করছে আগামীতে তাদের রেয়াত করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হবে।”
তাহের বলেন, “ভগবানগোলা বিধানসভাতেও এমন গদ্দার রয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে আছে, কিন্তু কাজ করছে অন্যরকম। আমরা সেটা দেখছি। আমাদের ভিজিলেন্স রয়েছে। দলীয় একটি সংস্থা আলাদা ভাবে তাদের উপর কড়া নজর রাখছে। কে কী করছে, কে অভিনয় করছে আমাদের সর্বত্র নজর রয়েছে। দল একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। তার সঙ্গে তিন, চারটে শাখা কাজ করছে আমাদের সঙ্গে। কেউ সামনে করছে। কেউ ভিতরে ভিতরে করছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘কারা কী করছে আমাদের কাছে তা আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। যাদের কাছে তারা দলবিরোধী প্রচার করছে তারাই আমাদের কাছে খবর দিচ্ছে। আমরা তা নোট করছি। তার ভিত্তিতে তদন্ত করছে দল। আইপ্যাক সংস্থাও বাড়ি বাড়ি ঘুরে তদন্ত করছে। প্রয়োজন ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বারে ভগবানগোলায় প্রয়াত ইদ্রিস আলির জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী করেছে ভগবানগোলা ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি রেয়াত হোসেন সরকারকে। তিনি ব্লক সভাপতি ছাড়াও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদেও রয়েছেন।
‘এক নেতা এক পদ’ দলের অভিষেক ঘোষিত নীতিকে কার্যত অমান্য করেই রেয়াতকে প্রার্থী করায় সেখানে দলের মধ্যে অন্তর্ঘাত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-বাম জোটের। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভগবানগোলা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের ভোট ছিল ৪৫ শতাংশ।
কংগ্রেসের ভোট ছিল ৩৩ শতাংশ। সিপিএম আলাদা ভাবে লড়াই করে পেয়েছিল ১২.৫ শতাংশ ভোট। বাম-কংগ্রেস জোট মিলিয়ে ভোটের অঙ্ক দাঁড়ায় ৪৫.৫ শতাংশ। ২০২১ সালে সিপিএম একক ভাবে প্রার্থী দেওয়ায় ভোট পায় ২১.১৫ শতাংশ। কংগ্রেসের বেশির ভাগ ভোট তৃণমূলের দিকে চলে যাওয়ায় ৬৮.০৬ শতাংশ ভোট পায় তৃণমূল, সিপিএম হারে ১.০৬ লক্ষ ভোটে। এ বার কংগ্রেস-বাম জোটের হাওয়া উঠেছে। তাতেই কিছু তৃণমূল নেতা গা ভাসিয়েছেন বলে দাবি।