সিউড়ী হাওড়া হুল এক্সপ্রেস এ করে রবিবার বিগ্রেড এর জনসভা য় যেতে যাত্রা করলেন সিউড়ির তৃনমুল সমর্থক। নিজস্ব চিত্র।
বিগ্রেডে জনগর্জন সভায় জেলা থেকে ১ লক্ষ মানুষ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল বীরভূম জেলা তৃণমূল। দলের নেতারা দাবি করেছিলেন, মানুষ মুখিয়ে আছেন সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য। সেই মতো পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, রবিবারের সেই সমাবেশে শেষ পর্যন্ত ভিড়ের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলেরই অন্দরে।
রবিবার ব্রিগেডের যে ভিড়ের ছবি সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে সামনে এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও। তাঁদের দাবি, ‘জনগর্জন’ সভায় পরিকল্পনাগত কর্পোরেট ছাপ থাকতে পারে, তবে আহামরি ভিড় হয়নি। এর পিছনে জেলা থেকে তুলনায় কম লোক নিয়ে যেতে পারাকে দায়ী করছেন জেলা তৃণমূলের কর্মীদেরই একাংশ। বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর যদিও দাবি, ‘‘১ লক্ষ না হোক, অন্তত ৬০-৬৫ হাজার মানুষ জেলা থেকে গিয়েছিলেন। মাঠ ভরানোয় যে জেলাগুলি অগ্রগণ্য ভূমিকা নিয়েছে, সেই তালিকায় অবশ্যই বীরভূম রয়েছে।’’
যদিও বিকাশের দাবির সঙ্গে সহমত নন ব্রিগেডের সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। তাঁদের দাবি, কত সংখ্যক লোক জেলা থেকে গিয়েছিলেন, সেটা সঠিক বলা সম্ভব নয়। তবে, যা বলা হচ্ছে, তত জনও যাননি। জেলার এক নেতার কথায়, ‘‘সভামঞ্চের সামনে র্যাম্পের কাছাকাছি এলাকায় ভিড় থাকলেও পিছনের দিকে প্রত্যাশিত ভিড় ছিল না। রোদের তাপও ছিল প্রখর।’’
তৃণমূল নেতারা দাবি করেছিলেন, শ’তিনেক বাস, ভাড়ার ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে ১০০০ ছোট গাড়ি এবং শনিবার রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, আমোদপুর হয়ে কলকাতা বা শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন ধরবেন অসংখ্য কর্মী-সমর্থক। দলেরই একটি সূত্র বলছে, ট্রেনে যে সংখ্যক লোক যাবেন বলে ভাবা হয়েছিল, তা হয়নি। বাসের সংখ্যাও ৩০০ নয়। জেলার বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠনের দাবি, খুব বেশি হলে কলকাতা গিয়েছিল ১০০-১২০টি বাস। সঙ্গে বাইরের জেলা থেকে ভাড়া করা হয়েছে ৩৫-৪০টি লাক্সারি বাস। গড়ে ৫০ জন ধরে যাত্রী ধরলে যাত্রীসংখ্যা ৮ হাজারের বেশি হবে না। সূত্রের খবর, তিনশোর কিছু বেশি গাড়িতে লোক গিয়েছে ব্রিগেডে। তাতে ৩ থেকে ৪ হাজারের বেশি লোক যেতে পারেননি। একাধিক তৃণমূল কর্মীরই প্রশ্ন, ‘‘তা হলে ৬০ থেকে ৭০ হাজার লোক গিয়েছে জেলা থেকে, এই দাবি কি যুক্তিযুক্ত?’’
দুবরাজপুর ব্লকের এক তৃণমূল নেতা জানালেন, ব্লক থেকে মোট ১২টি বাস গিয়েছিল। ১০টি ছোট গাড়ি এবং ট্রেন মিলিয়ে খুব বেশি হলে হাজার খানেক কর্মী-সমর্থক। খয়রাশোল ব্লক থেকে গিয়েছিল ১০টি লাক্সারি বাস। তাতে ৬৫০ জনের মতো ছিলেন। ওই ব্লক থেকে পাঁচটি ছোট গাড়ি ও ট্রেন মিলিয়ে সংখ্যা ৯০০-র বেশি নয়। রাজনগর ব্লক থেকে বাস গিয়েছিল ৫টি। ছোট গাড়ি ৫টি। কিছু লোক ট্রেনে গিয়েছেন। রামপুরহাট এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা মূলত ট্রেনের উপর নির্ভর করেছিল। কিন্তু, মহিলাদের বড় অংশ ট্রেনে কলকাতা যেতে পারেননি। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘কলকাতা যেতে বাস ভাড়া ২২ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। সঙ্গে খাওয়ানোর ব্যবস্থা ধরলে গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ। সেটাও মাথায় রাখতে হয়েছে।’’ বিকাশ অবশ্য দাবি করেছেন, অন্তত ২৫০টি বাস কলকাতা গিয়েছিল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘ব্রিগেডে প্রত্যাশিত ভিড় করতে পারেনি তৃণমূল। আমরা হয়তো রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণাত্মক। কিন্তু, তৃণমূলকে নিয়ে মানুষ যে চিন্তাভাবনা করছেন না, তা নয়। তাই তৃণমূল নেতারা বললেই মানুষ যাবেন এমনটা হয়নি।’’