নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি, ২ ফেব্রুয়ারি: বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার যে আবার রাজনৈতিক ডিগবাজি খেতে পারেন, সে আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল— এখন এমনটাই দাবি কংগ্রেস এবং
তৃণমূল নেতৃত্বের।
বার বার ‘পার্টনার’ বদল করে পটনার কুর্সি নিজের দখলে রেখেছেন নীতীশ কুমার। তিনি যে এ বার জোট-সঙ্গী পাল্টাতে চলেছে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল কিছু দিন ধরেই। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, বিহারে নিজেদের নিরঙ্কুশ দাপট অক্ষুণ্ণ রাখতে আরজেডি-র তেজস্বী যাদবরা যখন নীতীশকে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র আহ্বায়ক করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন একমাত্র দল হিসেবে তাতে আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কংগ্রেস যদিও তাতে সমর্থনই জানিয়েছিল গোড়ায়। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা একান্তে কংগ্রেসকে জানিয়ে দেন নীতীশের উপর পূর্ণ আস্থা রাখা সম্ভব নয়। তাঁর দলের এক জন সাংসদকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলবিরোধী আচরণ সত্ত্বেও নীতীশ জেডিইউ থেকে বরখাস্ত করেননি। ওই নেতা যে গোপনে বিজেপি এবং নীতীশের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন, তা অজানা ছিল না তৃণমূল ও তৃণমূল নেত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বাংলার শাসক দলের নেতারা মনে করছেন, গত অগস্টের শেষে বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্ডিয়া’র দ্বিতীয় বৈঠকে নীতীশের মানসিকতা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়। বিরোধী মঞ্চের নাম ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে সকলে রাজি থাকলেও আপত্তি তুলেছিলেন জেডিইউ প্রধান। তা এমন পর্যায়ে যায় যে জোটের উদ্যমে জল ঢেলে তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন। তাঁর দলের লাল্লন সিংহের মধ্যস্থতায় রফা হয়। কিন্তু সুর কেটে দেওয়াটাই সে দিন যে নীতীশের উদ্দেশ্য ছিল, তা কংগ্রেসকে জানানো হয়েছিল বলে দাবি
মমতার দলের।
নীতীশের ডিগবাজি নিয়ে কংগ্রেস সূত্রের যুক্তি, তিনি যে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, তা চার-পাঁচ সপ্তাহ আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও ১৩ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া’র ভার্চুয়াল বৈঠকে আহ্বায়ক হিসেবে নীতীশ কুমারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাতে মমতার সম্মতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে ঠিক হওয়ায় নীতীশ আচমকা রাহুল গান্ধীর নাম বিরোধী মঞ্চের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, তিনি আসলে জোটে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। তা বুঝেই রাহুল বলেছিলেন, কংগ্রেসের কেউ চেয়ারম্যান হলে সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেই যোগ্য। নীতীশকে আহ্বায়ক করা নিয়ে আপত্তি ছিল ডিএমকে, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনারও।
আজ রাহুলের অভিযোগ, সামান্য চাপে পড়তেই নীতীশ ‘ইউ-টার্ন’ করেছেন। কারণ, তাঁর উপরে কংগ্রেস, আরজেডি বিহারে জাতগণনার জন্য চাপ দিচ্ছিল। যার পরে গোটা দেশেই বিরোধীরা জাতগণনার দাবি তুলেছিল। উল্টো দিকে, বিজেপি জাতগণনা চাইছিল না বলে নীতীশের উপরে চাপ তৈরি করেছিল। মাঝখানে ফেঁসে যাওয়া নীতীশকে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেয়।