Lok Sabha Election 2024

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে জোর দেবে কারা, প্রথম ভোটারদের নজরে সেই দলই

ভবিষ্যতের ভিত যে শিক্ষা, সেই ব্যবস্থা এত টালমাটাল কেন? ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’রযুগেও ধর্মীয় মেরুকরণ কেন থাকবে? প্রশ্ন নবীন প্রজন্মের।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩০
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ওঁরা অনেকেই চান না, নিজের শহর কলকাতা ছেড়ে, বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে গিয়ে পড়াশোনা বা চাকরি করতে। কিন্তু এই রাজ্যে সেই সুযোগ কি ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে? আবার দেশও কি শিক্ষা ব্যবস্থা কিংবা কর্মসংস্থান নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠিক দিশা দেখাচ্ছে? এ নিয়েই দ্বিধায় তাঁরা।

Advertisement

দ্বিধাগ্রস্ত ওঁরা সকলেই প্রথম ভোটার। কেউ সবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন, কেউ আবার কলেজে পড়ছেন। তাঁরা অনেকেই জানাচ্ছেন, রাজ্য তথা দেশে শিক্ষার আরও বেশি সুযোগ হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে— এই আশাতেই এ বছর প্রথম বার ভোট দিতে যাচ্ছেন।

বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইকোলজি অ্যান্ড রিসার্চ’-এ এম এসসি করছেন মনস্তত্ত্বের পড়ুয়া প্রজ্ঞা ভট্টাচার্য। প্রথম বার ভোট দিতে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসবেন তিনি। কারণ, তিনি মনে করেন, এটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে, প্রজ্ঞার কথায় স্পষ্ট অনুযোগের সুর, “শিক্ষা ব্যবস্থা এ রাজ্যে যেন বড্ড বেশি টালমাটাল। বেঙ্গালুরুতে দেখেছি, সব কিছু নিয়ম মেনে হয়। পরীক্ষা কবে হবে? পরীক্ষা বাতিল হবে না তো? কবে রেজ়াল্ট বেরোবে? মার্কশিট কবে পাব? এ রকম অনেক কিছুতেই এই রাজ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রথম ভোটার হিসাবে চাইব, এই সব অনিশ্চয়তা দূর হোক।’’ প্রজ্ঞার মতে, বিশেষ করে এ রাজ্যে চাকরির সুযোগ ক্রমেই কমছে। চাকরির জন্য বাইরে গেলে মা-বাবারা একা থাকেন। নিজের দেশে চাকরি পেলে বিদেশে কেন যাব? দেশের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যেও শিল্প আসুক, কর্মসংস্থান বাড়ুক।”

Advertisement

কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজে বায়োটেকনোলজিতে বি টেক করছেন সম্পূর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনিও প্রথম ভোট দেবেন। রাজনীতিতে আগ্রহী না হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও রাজনীতির বিষয়ে ধারণা রয়েছে তাঁর। সম্পূর্ণা চাইছেন দেশ জুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন। তাঁর মতে, “পড়াশোনাটা যদি আরও একটু কম খরচে করা যেত, তা হলে ভাল হত। সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো ভাল হলে এত টাকা খরচ করে বেসরকারি স্কুলে পড়তে হত না।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, “প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতিকে কি কিছুটা পাল্টানোর কথা ভাববেন দেশের নেতা-মন্ত্রীরা? আমি ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা নিট দিয়েছিলাম। কিন্তু, সাধারণ ক্যাটিগরিতে সুযোগ পাওয়ার মতো ততটা ভাল ফল হয়নি। অথচ, আমার থেকে অনেক কম নম্বর পাওয়া ছেলেমেয়েরা সংরক্ষণের কোটায় ডাক্তারি পড়ছেন। আমার স্বপ্নটা অধরা রয়ে গেল।”

একটি বেসরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন মন্দ্রীল সরকার। প্রথম ভোট দিতে যাওয়া মন্দ্রীল মনে করেন, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র যুগেও ধর্মীয় মেরুকরণ থেকেই যাচ্ছে। মন্দ্রীলের আক্ষেপ, “প্রায় সব রাজনৈতিক দলই তাদের ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে ধর্মীয় মেরুকরণের দিকে চলে যায়। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা এমন একটা ভারত দেখতে চাই, যেখানে রাজনৈতিক স্বার্থপূরণে ধর্ম দিয়ে কাউকে প্রভাবিত করা হবে না।” সেই সঙ্গে মন্দ্রীলের প্রশ্ন, ভোটের টিকিট না পেয়ে দল বদল করছেন যে নেতারা, তাঁরা যে কোনও ভাবে টিকিট পাওয়ার পরে প্রতিশ্রুতি কি রক্ষা করছেন?

সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া সুস্মিতা হালদারের স্বীকারোক্তি, “আমি রাজনীতি তেমন বুঝি না। তবে, আশপাশে তাকালেই দেখি, এখানে পড়াশোনা করে রাজ্যের বাইরে চাকরি করতে চলে যাচ্ছেন দাদা-দিদিরা। তাই যে দল কর্মসংস্থানের উপরে গুরুত্ব দেবে, আমি সেই দলকেই ভোট দিতে পছন্দ করব।’’

প্রথম ভোট দেবেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সির পড়ুয়া শেখ ফিরোজ। তিনি আবার মনে করেন, ‘‘সিমেস্টার ব্যবস্থার জন্য পড়ুয়ারা বিষয়ের গভীরে যেতে পারছে না। এর ফলে উচ্চশিক্ষায় অসুবিধা হচ্ছে।’’ তাঁর আর্জি, যে সরকারই আসুক, তারা যেন পরীক্ষা ব্যবস্থায় নজর দেয়। ফিরোজের মনে হয়েছে, “ভোট এলে রাজনৈতিক নেতারা যত প্রতিশ্রুতি দেন, তার মধ্যে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি থাকে সব থেকে কম।’’

সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন অনিশা দাস। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ বিরক্ত তিনি। তাঁর মতে, দল বদল করেন যাঁরা, তাঁদের আত্মমর্যাদা নেই। অনিশা বলেন, “কলকাতার একটা ঐতিহ্য আছে, নিজস্বতা আছে। উন্নয়ন করতে গিয়ে শহরের সেই নিজস্বতা, সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেন না যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement