বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চে বিজেপি প্রার্থী অনিল অ্যান্টনি। — নিজস্ব চিত্র।
বলিউডের বিখ্যাত ছবিটার নাম ছিল ‘অমর, আকবর, অ্যান্টনি’। মালয়ালি সমাজ এমনিতে সিনেমা-ভক্ত। এই ভোটের মরসুমে মালয়ালমে নতুন ছবি হতে পারে ‘দ্য অ্যান্টনিজ’!
ছবির চিত্রনাট্যের মতোই রসদ মজুত রাজনীতির এই যুদ্ধে। চর্চার কেন্দ্রে তিন অ্যান্টনি। তাঁদের মধ্যে দু’জন সরাসরি ভোট-যুদ্ধে মুখোমুখি। আর অন্য জন পিতামহ ভীষ্মের মতো বিবেকের বাণী শোনাচ্ছেন!
আরাকাপরম্বিল কুরিয়েন অ্যান্টনির স্তুতি না করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বক্তৃতা শেষ করছেন না! ঘৃণা ভাষণ আর হুঙ্কারে বিদ্ধ এই নির্বাচনী আবহে যা একেবারেই ব্যতিক্রম শোনাচ্ছে। দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অ্যান্টনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, বিজেপির প্রার্থী, তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র অনিল অ্যান্টনির পরাজয় চান তিনি! আর তার পরেই রাজনাথ সিংহ, জগৎ প্রকাশ নড্ডারা বর্ষীয়ান অ্যান্টনির উদ্দেশে সাদা পায়রা ওড়াচ্ছেন।
বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ যেমন বলেছেন, ‘‘অ্যান্টনির মতো স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হয় না। তাঁকে বলছি, আপনার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ নয়। লড়াই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং পরিবারবাদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। আপনার কাছে আবেদন, আমাদের সমর্থন করতে না পারেন, ছেলেকে অন্তত আশীর্বাদ করবেন!’’ প্রার্থী অনিলের প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডার পরামর্শ, ‘‘সকালে বাবার আশীর্বাদ নিয়ে তার পরে নিজের ভোটটা দিতে যেও!’’
পাতানামতিট্টা লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের বর্তমান সাংসদ অ্যান্টো অ্যান্টনির বিরুদ্ধে অনিল অ্যান্টনিকে এ বার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিজেপি। জুনিয়র অ্যান্টনিও এর মধ্যেই চমকপ্রদ এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন।
কেরলের ‘বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ’-এর কাছ থেকে তাদের সমর্থন আদায় করেছেন। বিজেপি প্রার্থীকে খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠিত কোনও চার্চ কর্তৃপক্ষ সমর্থন জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি! বিজেপির আশা, চার্চের এই সমর্থনের জোরে শুধু অনিল নন, আরও কিছু কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীদের ভোট বাড়বে। কংগ্রেস যদিও মনে করিয়ে দিচ্ছে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই চার্চ এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত অ-সরকারি সংগঠনের তহবিল নিয়ে তদন্ত করে বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য আসা আটকে দিয়েছিল। এখন তাই ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও’ নীতিতে এই সমর্থন!
কংগ্রেস প্রার্থী অ্যান্টোর আশা, এ সবের পরেও তাঁর জয় আটকাবে না। সিনিয়র অ্যান্টনি তো তাঁর সহায়! তিরুঅনন্তপুরমে প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর ইন্দিরা ভবনে ৮৩ বছরের প্রবীণ নেতার জন্য ঘর এখনও বরাদ্দ। কেরল রাজনীতির ‘মিস্টার ক্লিন’ অ্যান্টনি অনেক আগেই নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা করেছেন।
তবে এখন বলেন, ‘‘কংগ্রেসই আমার ধর্ম। বিজেপির পরাজয় ছাড়া কিছু চাই না। কংগ্রেস নেতাদের পরিবারের লোকজন বিজেপিতে যোগ দিয়ে অন্যায় করছে।’’ দাবি করেন, বড় ছেলে অনিল গত বছর বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে এক মাস ঘুমোতে পারেননি। কেরলে যখন কংগ্রেস ও বামের তিক্ত বিবাদ চলছে, তখন একমাত্র অ্যান্টনিই বলতে পারেন, ‘‘আরএসএস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সিপিএমের লড়াইকে কোনও ভাবে অস্বীকার করার জায়গা নেই। সেই কারণেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কংগ্রেস, সিপিএম একসঙ্গে আছে। শুধু কেরলে সিপিএম কংগ্রেস-বিরোধিতা করছে। এখানকার বাম নেতারা রাহুলকে (গান্ধী) প্ররোচিত করেছেন বলেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে বলছেন।’’
ছেলে অনিল আবার মনে করেন, ‘‘কংগ্রেস তো আমিও করেছি। কিন্তু দলটা এখন অসহিষ্ণু হয়ে গিয়েছে এবং একটা পরিবারের (গান্ধী) স্বার্থে চলছে!’’
অনিলের ভাই অজিত পাল্টা বলে রেখেছেন, ‘‘বিজেপি ওকে (অনিল) ব্যবহার করে তরকারি থেকে কারি পাতার মতো ছুড়ে ফেলে দেবে এক দিন!’’
এই মহাভারতের কাব্যে প্রায় উপেক্ষিতের মতো রয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ়্যাক। পাতানামতিট্টায় এ বারের সিপিএম প্রার্থী আইজ়্যাকের মতে, ‘‘বিজেপি পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে এত কথা বলে তার পরে কংগ্রেসের পরিবার থেকেই লোক নিয়ে আসে! মূল লড়াই এখন ফ্যাসিবাদী বিজেপির হাত থেকে দেশ বাঁচানোর।’’ কিন্তু কেরলের সঙ্গিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কি ভোটে প্রভাব ফেলবে না? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দাবি, সীমিত সাধ্যের মধ্যেও রাজ্য সরকার আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে কাজ করছে এবং মোদী সরকার তাতে বাধা দিচ্ছে, এটাও জনতা দেখছে।
তাঁর প্রশ্ন এবং দাবি নিয়ে আইজ়্যাক আপাতত পার্শ্ব-চরিত্র। সিনেমাটা কিন্তু ‘দ্য অ্যান্টনিজ’!