Lok Sabha Election 2024

‘গৃহলক্ষ্মী’দের জন্য কি ভোটে লক্ষ্মীলাভ হবে কংগ্রেসের

এ বার চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরের সামনে প্রসাদ খেয়ে সোজা যাবেন মাইসুরুর রাজপ্রাসাদ দেখতে। বাসে চেপে দশ-বারো কিলোমিটার রাস্তা। তারপরে খাওয়াদাওয়া সেরে আবার বাস ধরে বাড়ি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

মাইসুরু শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২১
Share:

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

অনেক দিনের সাধ ছিল। এত বছরে পূর্ণ হল। সকাল সকাল পুজো হয়ে গিয়েছে। আর চিন্তা নেই।মাইসুরুর চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির থেকে বেরিয়ে আসছিলেন পঁচিশ-তিরিশ জন মহিলা। দল বেঁধে এসেছেন বেঙ্গালুরুর কাছে গোরাঘাট্টা গ্রাম থেকে। প্রথমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বেঙ্গালুরুর বাস টার্মিনাস। তারপর সেখান থেকে রাজ্য পরিবহণের বাস ধরে মাইসুরু। দেড়শো কিলোমিটার রাস্তা হইহই করতে করতে কেটে গিয়েছে।

Advertisement

এ বার চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরের সামনে প্রসাদ খেয়ে সোজা যাবেন মাইসুরুর রাজপ্রাসাদ দেখতে। বাসে চেপে দশ-বারো কিলোমিটার রাস্তা। তারপরে খাওয়াদাওয়া সেরে আবার বাস ধরে বাড়ি। অরুণা, বিজয়া, শোভা, বরুণা—কেউ গৃহবধূ, কেউ ছোটখাটো কাজকর্ম করেন। কেউ সংসারের খরচ জোগাতে সেলাইয়ের কাজ, কেউ আবার ধূপকাঠি-সাবান তৈরির কারখানায় কাজ করেন।

বেঙ্গালুরু থেকে মাইসুরু ট্রেনে এলেন না কেন? অরুণা-বিজয়ারা উত্তর দেন, ‘‘মোদীজির বন্দে ভারত চালু হয়েছে। একদম বিদেশি ট্রেনের মতো দেখতে। কিন্তু আসতে যেতে হাজার টাকা চলে যাবে। আমরা তো বাসে চেপে পুরো ফ্রি-তে ঘুরে গেলাম! বেঁচে থাকুন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। হাতখরচার জন্যও বাড়ির লোকের কাছে হাত পাততে হয় না। মাস গেলে দু’হাজার টাকাপেয়ে যাই।”

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে যাহা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, কর্নাটকে তাহাই ‘গৃহলক্ষ্মী’। লক্ষ্মীর ভান্ডারে টাকার অঙ্ক সবে পাঁচশো থেকে বেড়ে হাজার হয়েছে। গৃহলক্ষ্মীতে প্রথম থেকেই দু’হাজার টাকা মিলছে। তার সঙ্গে ‘শক্তি’। মহিলাদের জন্য গোটা রাজ্যে নিখরচায় বাস ভ্রমণ। যেখানে খুশি, যত বার ইচ্ছে।মহিলারা দু’হাত তুলে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে আশীর্বাদ করছেন। লোকসভা ভোটের ময়দানে মহিলাদের নিখরচায় বাস ভ্রমণ ও প্রতি মাসে দু’হাজার টাকা কংগ্রেসের সবথেকে বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এমনকি, বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব মানছেন, কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের এই দুই ‘গ্যারান্টি’ যে মহিলাদের কাছে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, তা তাঁরা ভাবেননি। বিশেষত আর্থিক ভাবে পিছনের সারির মানুষ ও অনগ্রসরদের কাছে এই দুই প্রকল্প সাড়া ফেলে দিয়েছে।

গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে কর্নাটকে ক্ষমতায় আসার আগে কংগ্রেসের পাঁচ ‘গ্যারান্টি’র অন্যতম ছিল, মহিলাদের জন্য নিখরচায় বাস ভ্রমণ এবং গরিব মহিলাদেরমাসে দু’হাজার টাকার আর্থিক সাহায্য। সিদ্দারামাইয়া সরকার জুন মাসে ক্ষমতায় এসে ‘শক্তি’ ও ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্প চালু করে। ‘শক্তি’ প্রকল্পে প্রথম ছয় মাসেই মহিলাদের নিখরচায় বাস ভ্রমণের সংখ্যা ১০০ কোটি হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্পে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ মহিলা নাম লিখিয়েছেন। মাস গেলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দু’হাজার টাকা ঢুকছে। সরকারি হিসেবে গরিব পরিবারের ৯৪ শতাংশ মহিলা ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্পের আওতায় চলে এসেছেন।

কর্নাটকের কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়াল সরকারও মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস ভ্রমণ চালু করেছে। সে তো শুধু দিল্লি শহরের মধ্যে। কর্নাটকে রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দূরপাল্লার বাসে চেপে মহিলারা বিনা খরচে যেতে পারছেন। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্যের টাকাও সিদ্দারামাইয়া সরকার জোগাচ্ছে। শুধু দুই প্রকল্পেই প্রতি বছর ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।

শুক্রবার কর্নাটকের ২৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। বাকি ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়বে ৭ মে। বিজেপি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মতো এ বারও ২৫টি আসনে জিততে চায়। কিন্তু কংগ্রেস তার পাঁচ ‘গ্যারান্টি’ রক্ষাকে হাতিয়ার করছে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া প্রতিটি জনসভায় হাতে গুণে পাঁচটি ‘গ্যারান্টি’র কথা বলছেন। শক্তি প্রকল্পে মহিলাদের নিখরচায় বাস ভ্রমণ। গৃহলক্ষ্মীতে দু’হাজার টাকা। অন্নভাগ্য প্রকল্পে প্রতি মাসে মাথা পিছু ১৭০ টাকা। গৃহজ্যোতি প্রকল্পে ২০০ ইউনিট বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ। যুবানিধিতে বেকারদের জন্য স্কলারশিপ। সিদ্দারামাইয়া সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগও তুলছেন।

উল্টো দিকে, বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা ও মোদী সরকারের কাজের সাফল্যে ভর করে বৈতরণী পার হতে চাইছে। তাদের অভিযোগ, কংগ্রেস খয়রাতি করতে গিয়ে উন্নয়নের কাজকে পিছনের সারিতে ঠেলে দিয়েছে। জেডিএসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোক্কালিগা ভোটব্যাঙ্ককে ঝুলিতে টেনে আনারও স্বপ্নদেখছে বিজেপি।

এ সবের মধ্যে মাইসুরু রাজপ্রাসাদের সামনে বেজার মুখে বসে রয়েছেন টি এস অরুণ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে খান দুয়েক সওয়ারি মিলেছে। আগে চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির থেকে মাইসুরুর প্রাসাদ অগুণতি বার ভাড়া মিলত। এখন মহিলারা বিনা টিকিটের বাস ছেড়ে অটোর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। অরুণ বিরক্ত মুখে বলেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়া সরকারের এই নিখরচার বাসযাত্রায় আমার রোজগারে টান পড়েছে। বাড়িতে অবশ্য সিদ্দারামাইয়ার নামে নিন্দা করা যাবে না। ঘরের লক্ষ্মী রান্নাঘরের চিমটে দিয়ে পেটাবে। গৃহলক্ষ্মীর টাকা পায় কি না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement