সর্বানন্দ সোনোয়াল। — নিজস্ব চিত্র।
বর্মা থেকে আসা মান হানাদারদের পথ আটকে তাঁদের হত্যা করেছিলেন এই এলাকার মানুষ। সেই থেকেই এলাকার নাম মানকটা।
বিদেশি রোখার ইতিহাস থেকে যে এলাকার নামকরণ, ডিব্রুগড়ের সেই এলাকাতেই তিন তলা সাদা বাড়ির বৈঠকখানায় এক দিকে নরেন্দ্র মোদী ও দ্রৌপদী মুর্মুর ছবি। পাশের দেওয়ালে ছবি অসমের সঙ্গীতকার, কবি, চিত্রপরিচালক, সাহিত্যিক জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়াল, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার। আর দেওয়ালে আহোম সেনাপতি লাচিত বরফুকনের প্রতিকৃতি। শেষোক্ত তিন জন অসমের আত্মসম্মান, সংস্কৃতির প্রতীক। লাচিত বিদেশি বিতাড়নের প্রতিভূ। বাড়ির মালিক নিজেও বিদেশি চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত বিতর্কিত আইএমডিটি (ইললিগাল মাইগ্র্যান্টস ডিটারমিনেশন বাই ট্রাইবুন্যালস অ্যাক্ট) আইন মামলা লড়ে প্রত্যাহার করিয়ে ‘জাতীয় নায়ক’ খেতাব পেয়েছিলেন।
ব্রহ্মপুত্র দিয়ে তার পর অনেক জল গড়িয়েছে। একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও উজানি অসমে একমাত্র বড় নাম হিসেবে লোকসভা ভোটে লড়তে নামা সর্বানন্দ সোনোয়াল এখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পৃষ্ঠপোষক। অতীতে অগপ-তে থাকাকালীন ডিব্রুগড়ের সাংসদ হলেও তাঁর জন্মস্থল থেকে এই প্রথম বিজেপির হয়ে লড়তে নামছেন সোনোয়াল। লড়াই যাঁর সঙ্গে, সেই লুরিণজ্যোতি গগৈও সোনোয়ালের মতোই আসু থেকে উঠে আসা নেতা। লুরিণের রাজনৈতিক উত্থানই সিএএ বিরোধী আন্দোলন থেকে।
ধারে ও ভারে এগিয়ে থাকলেও প্রচারে খামতি রাখছেন না সোনোয়াল। ডিব্রুগড়ের বিরাট লোকসভা কেন্দ্রে যেমন বাগানের আদিবাসী ভোট রয়েছে, রয়েছে আহোম ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ভোট— যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে এসটি মর্যাদা চেয়েও পাচ্ছে না। আবার এখানে নেপালি ও বাঙালি ভোটারও প্রচুর, যাঁরা বিজেপির চেনা ভোটব্যাঙ্ক। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল,
উত্তর-পূর্বে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হচ্ছে। মণিপুরে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা সমালোচিত। তাই অসম তথা উত্তর-পূর্বে কতটা সফল হবে বিজেপি?
সোনোয়ালের দাবি, ‘‘উত্তর-পূর্বে ২৫টির মধ্যে ২২টি আসনে এনডিএ-র জয় নিশ্চিত। কংগ্রেসের ৬০ বছরের শাসনের কুফল, পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি, বিভাজননীতি দেখে জনতা ক্লান্ত। দেশের উন্নয়নযাত্রা অক্ষুণ্ণ রাখতে অন্তত ৩৭০টি আসনে বিজেপিকে জেতাবেন দেশবাসী। মণিপুরেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল। যারা সমস্যা তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের আইনি পথেই দমন করা হবে।’’
কিন্তু যিনি অতীতে বিদেশি সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করা আসু ও অগপ-র সভাপতি ছিলেন, যিনি নিজে আইএমডিটি আইন বাতিলের নায়ক, তিনিই এখন সিএএ-র পক্ষে কথা বলছেন! রাজ্যে যেখানে সিএএ নিয়ে অসন্তোষ চলছে, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে স্ববিরোধিতার অভিযোগ কি জোরদার হবে না? সর্বানন্দের যুক্তি, ‘‘বিদেশি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে পুলিশের উপরে দায় চাপিয়ে আইএমডিটি আইন আনা হয়েছিল, যা শুধু অসমে প্রযোজ্য হয়েছিল। আমি আইনি পথে হেঁটে তা বাতিল করিয়েছিলাম। কিন্তু সিএএ গোটা দেশের আইন। সেখানে কোনও বহিরাগতকে নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়নি। সিএএ আসায় দলে দলে বাংলাদেশির নাগরিকত্ব পাওয়ার কংগ্রেসি অপপ্রচার যে ভুয়ো, তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে অসমিয়া সমাজে মেরুকরণ করছে। তা উড়িয়ে দিয়ে সোনোয়াল বলেন, ‘‘যখন কোনও রাস্তা, সেতু, হাসপাতাল তৈরি হয়, তা কি কোনও একটি সম্প্রদায়ের জন্য হয়? আমরা সকলের সমান উন্নয়নে দায়বদ্ধ।’’
রামমন্দির এ বারের ভোটে বিজেপির বড় অস্ত্র। সোনোয়াল বলেন, ‘‘অসমিয়ারা শৈশব থেকেই প্রার্থনা করেন, ‘‘কৃষ্ণরাম নারায়ণ গোবিন্দ জয় জয়। রাম ও কৃষ্ণ অসমিয়া সমাজ-পরম্পরার বরাবরের অঙ্গ। তাই তাঁদের আশীর্বাদ বিজেপি পাবে বইকি!’’