—প্রতীকী ছবি।
প্রথমে জেলা সদর হাওয়াই থেকে বাসে ১০০ কিলোমিটার পার করে টিডিং। সেখান থেকে কাঁধে নিয়ে পাহাড় চড়ে তোলা হবে বেঞ্চ, টিনের পাত, খাবার, জল ও অন্যান্য সামগ্রী। এই ভাবে ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পার করে মালোগাম বুথে পৌঁছচ্ছেন ভোটকর্মীদের দল। এত কাণ্ড একটি ভোট সংগ্রহ করার জন্য!
তিনি অরুণাচল তথা দেশের নির্বাচনী গণতন্ত্রের অন্যতম পোস্টার-গার্ল সোকেলা তায়েং। মুখ্য নির্বাচনী অফিসার পবন কুমার সাইন বলেন, “দেশের এক জন ভোটারও যেন
বাদ না পড়েন তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।”
মালোগাম বুথ চিন সীমান্তের কাছে হায়ুলিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী দাসাংলু পুল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেলেও লোকসভা ভোটের জন্য সোকেলার ভোট নিতে বুথ তৈরি করতেই হবে। মালোগামের বাকি বাসিন্দারা অন্যত্র ভোটার তালিকায় নাম ঢুকিয়েছেন। আগে দুই সন্তানকে নিয়ে মালোগামেই থাকতেন সোকেলা। ছেলেমেয়েরা অন্যত্র পড়তে যাওয়ায় তিনি এখন লোহিত জেলার ওয়াক্রোতে চলে এসেছেন। কিন্তু ভিটে ছাড়লেও ওই বুথ থেকেই ভোট দেওয়ার জেদ ছাড়েননি ৪৪ বছরের সোকেলা। বলেন, “আমি ১৮ এপ্রিলই মালোগাম পৌঁছে যাব। ১৯ তারিখ সকালে দেব ভোট।” অবশ্য বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইভিএম বন্ধ করার নিয়ম না থাকায় বিকেল পর্যন্ত ভোটকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীর দলকে সেখানেই থাকতে হবে।
পাপুম পারে জেলার সিলসাংগোয় সার্চ গাই গ্রামের বাসিন্দা, ১৯ বছরের প্রতিবন্ধী ভোটার রিঙ্গু আনের ভোট সংগ্রহ করতে পাঁচ ঘণ্টা ধরে, ১২০ কিলোমিটার পথ পার করলেন ভোটকর্মীরা। প্রত্যন্ত বুথগুলিতে পৌঁছতে ভোটকর্মীদের প্রথম দল রওনা হয়েছেন। যতটা পারবেন গাড়িতে, বাকিটা পাহাড় চড়ে পাড়ি দেবেন তাঁরা। রাজ্যে ২২২৬টি বুথের মধ্যে ২২৮টি বুথে শুধু হেঁটেই পৌঁছনো সম্ভব। ৬১টি বুথে পৌঁছতে ভোটকর্মীদের ২ দিন ও সাতটি বুথে পৌঁছতে তিন দিন ধরে হাঁটতে হবে!
এ দিকে ভোটদানের আগেই অরুণাচলে বিনা যুদ্ধে জিতেছেন বিজেপির ১০ প্রার্থী। তাঁদের মধ্যেই আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুলের স্ত্রী দাসাংলু পুল। ৪৬ বছরের দাসাংলু এই নিয়ে তিন বার বিধায়ক হলেন, যা অরুণাচলে বিরল। এ বারের বিধানসভা ভোটে অরুণাচলে পুল ছাড়াও লড়তে নেমেছেন আরও ৬ মহিলা প্রার্থী।
অরুণাচলে রাজনীতিতে যেখানে দলবদল জলভাত, সেখানে রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মারিয়া কেংলাং গত ২৭ বছর ধরে কংগ্রেসেই আছেন। উত্তর চাংলাংয়ে তিনি বিজেপির বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকার তেসাম পোংতে ও আরও ২ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়বেন। গত তিন দশক ধরে কংগ্রেসের কর্মী থাকা গোল্লো ইয়াপুং টানা রাজ্য
বিজেপি সভাপতি বিয়ুরাম ওয়াহগের বিরুদ্ধে পাক্কে কেসাং কেন্দ্রে লড়তে নামছেন।
২০১৯ সালে বিধায়ক টিরং আবো জঙ্গি হামলায় মারা যাওয়ার পরে নির্দল প্রার্থী হিসেবে খোনসার বিধায়ক হয়েছিলেন স্ত্রী চাকাত আবো। এ বার তিনি বিজেপির টিকিটে লড়ছেন। ২০২২ সালে লুমলার বিজেপি বিধায়ক জাম্বে তাশির মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী সেরিং লামু উপ-নির্বাচনে জিতেছিলেন। এবার তাঁর আসন ধরে রাখার লড়াই। বায়োটেকনলজির স্নাতক ও ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া জেরেমাই ক্রোং বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে গত কয়েক বছর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলেন। তেজু কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে এ বারেই প্রথম তাঁর রাজনীতিতে যোগদান। বাসারে এনপিপি দুর্গে বিজেপি প্রার্থী করেছে জেলা পরিষদের চেয়ারপার্সন ন্যাবি জিনি দির্চিকে।
লোকসভা ভোটে এখানে মহিলা প্রার্থী এক জনই। পশ্চিম আসনে গণ সুরক্ষা পার্টির টোকো শীতল।