—প্রতীকী চিত্র।
নির্বাচন আসতেই ‘চাহিদা’ বেড়েছে অস্ত্রের। দামও বেড়েছে। চুপিসাড়ে দরদাম করলেই উত্তর মিলবে, ‘‘আভি তো রিস্ক বহুত জ়াদা।’’ সে জন্যেই না কি দাম চড়েছে।
তোর্সার তীর থেকে কোচবিহারের বিস্তীর্ণ বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে অস্ত্রের দাপাদাপির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। অভিযোগ, নির্বাচনের সময় অস্ত্রের দাপট বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সে অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ যে বসে রয়েছে, তা নয়। পুলিশ সূত্রে খবর, গত দু’মাসে ১৪টির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েক জনকে। তার পরেও রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের একটি অংশের হাতে এখনও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। কিছু অস্ত্র রয়েছে রাজনৈতিক কর্মীদের হাতেও। সে অস্ত্র উদ্ধারে সরব হয়েছে শাসক-বিরোধী সকলেই। না হলে ভোটের সময় ওই অস্ত্রেই ‘দাদাগিরি’ চলবে বলে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জারি রয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েক জনকে।’’
বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলা কোচবিহার। অসমের সঙ্গেও তার সীমানা রয়েছে। আর পাঁচটি জেলার মতোই অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে জেলায়। তাই বছরভর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু নির্বাচনের সময় অস্ত্রের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায় জেলায়, এমনটাই তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে।
পুলিশ মনে করে, এই অঞ্চল রাজনৈতিক ভাবে একটু উত্তেজনাপ্রবণ। এলাকা দখল বা নিজের কর্তৃত্ব কায়েমের জন্য একাধিক পক্ষ অস্ত্র মজুত করে রাখে। আর তাতেই ভোটের আগে-পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহতের অভিযোগও ওঠে।
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে কোচবিহার জেলায় এমন ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে এ বার শুরু থেকেই সতর্ক রাজনৈতিক দলগুলি। শাসক দল তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘বেআইনি অস্ত্র রয়েছে জেলায়। ভেটাগুড়ির একটি বাড়িতে রয়েছে অস্ত্র। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব, যাতে ওই অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।’’
বিজেপির অবশ্য দাবি, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করে রেখেছেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরাই। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘বেআইনি অস্ত্র এখনও মজুত করে রাখা হয়েছে। শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হাতে তা রয়েছে, সবাই জানে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানাব।’’
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, বিহারের মুঙ্গের থেকে ওই অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে কোচবিহারে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে সড়কপথে ঘন ঘন গাড়ি বদলে, হাতবদল করে তা কোচবিহারে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভোটের মুখে চাহিদা বাড়তেই এক-একটি অস্ত্রের দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। ১০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে নানা রকমের আগ্নেয়াস্ত্র মিলছে। বাম নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি দীপক সরকার বলেন, ‘‘আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সে কথা আমরা কমিশনের কাছে ইতিমধ্যেই জানিয়েছি।’’
(তথ্যসূত্র: জেলা পুলিশ)