—প্রতীকী ছবি।
দেশের অর্ধেক আসনে ভোট শেষ। এ বার বাকি অর্ধেক আসনে ভোটের লক্ষ্যে আগামিকাল দেশের দশটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৬টি আসনে ভোট হতে চলেছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ভোট হবে আটটি আসনে।
কাল জম্মু-কাশ্মীর-সহ যে ৯টি রাজ্যে নির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ নিয়ে বিজেপি বিশেষ ভাবে আশাবাদী। ভোটকুশলীদের একাংশ মনে করছেন,
গোবলয়-সহ বিজেপির শক্ত জমি হিসেবে চিহ্নিত একাধিক রাজ্যে তাদের আসন কমলেও ওই দু’রাজ্যে তারা ভাল ফল করতে পারে। ৫ বছর আগে তেলঙ্গানায় ১৭টি আসনের মধ্যে ৪টিতে জিতেছিল বিজেপি। ছ’মাস আগে কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে জিতে এলেও বিজেপি মনে করছে, ভোটের মুখে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হওয়ায় আমজনতার একটি বড় অংশ মুখ ফিরিয়েছে তাদের থেকে। রাজ্যের অন্যতম আঞ্চলিক দল
ভারত রাষ্ট্র সমিতির জনপ্রিয়তা কার্যত তলানিতে। ফলে তেলঙ্গানায় দ্বৈরথে কংগ্রেস ও বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের আশা, গত বারের চেয়ে আসনসংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হবে তাদের।
অন্ধ্রপ্রদেশে এ যাত্রায় তেলুগু দেশম পার্টি ও পবন কল্যাণের জনসেনা পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিজেপি। ওই রাজ্যে পঁচিশটির মধ্যে ছ’টি আসনে লড়ছে বিজেপি। গত দু’টি লোকসভায় অন্ধ্রপ্রদেশে খাতা খুলতে না পারা বিজেপির আশা, এ যাত্রায় সেই ছবি বদলাবে। বিজেপি-জোট এ বার ওই রাজ্যে অন্তত পনেরোটির কাছাকাছি আসন জিতে নেবে বলেই আশায় বুক বাঁধছেন পদ্ম নেতারা। সব মিলিয়ে ওই দুই রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে অন্তত পঁচিশ আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে গেরুয়া জোট। যাতে অন্য রাজ্যে যে আসন কমবে, সেই ঘাটতি যথাসম্ভব কমানো যায়। অন্ধ্রপ্রদেশে আগামিকাল লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনও রয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতাসীন ওয়াইএসআর জগন্মোহনের দলকে হারিয়ে এনডিএ জোট ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভোটকুশলীদের একাংশ।
আগামিকাল যে ৯৬ আসনে ভোট হবে, পাঁচ বছর আগে তার মধ্যে বিজেপি প্রার্থীরা জিতেছিলেন ৪২টি আসনে। বিহারে জেডিইউ ও এলজেপি একটি করে আসন জয়ী হয়েছিল। এ ছাড়া বর্তমানের জোট সঙ্গী টিডিপি অন্ধ্রপ্রদেশে তিনটি ও মহারাষ্ট্রে অবিভক্ত শিবসেনা দু’টি আসনে জয় পেয়েছিল। সব মিলিয়ে ৯৬টি আসনের মধ্যে এনডিএ ৪৯টি আসন নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। অন্য দিকে ৪৭টি আসনে জিতেছিল বিরোধী জোট। যার অর্থ, আসন দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় আধাআধি ভাগ হয়ে যায়। এ বার তেলঙ্গানায় সদ্য ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। সেখানে ভাল ফলের আশা করছে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশে যে ১৩টি আসনে ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে ১১টিতে গত বার বিজেপি জেতে। এ বারে পরিস্থিতি ভিন্ন। কংগ্রেস-এসপি জোটের নেতারা মনে করছেন, প্রথম তিনটি পর্বে যে ভাবে মুসলিম, কৃষক ও জাঠেরা বিজেপির বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন, তাতে ইন্ডিয়া জোট বিজেপির জেতা একাধিক আসন ছিনিয়ে নেবে। একই অবস্থা মহারাষ্ট্রেও। সেখানে সরকারে এনডিএ থাকলেও, শরিক শিবসেনা ও এনসিপি-তে বিজেপি ভাঙন ধরানোয় মানুষের সহানুভূতির ভোট যে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত জোটের নেতারা।
প্রথম তিনটি দফার ভোটে দলের ফল ভাল হবে না বলেই আশঙ্কায় বিজেপি নেতৃত্ব। ঘরোয়া ভাবে দলের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে, গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে মোদীর নামে ভোট পড়েছিল। এ বার সেই মোদী-ঝড়ের লেশমাত্র নেই। সেই কারণে উন্নয়নমুখী রাজনীতির প্রচার ছেড়ে মেরুকরণের পথে হাঁটতে হয়েছে বিজেপিকে। ভোটারদের উজ্জীবিত করতে পাকিস্তান, হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের রাজীতির উপরে ভরসা করতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের। কিন্তু তাতেও যে বিশেষ লাভ হয়নি, তা দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফার ভোট থেকে স্পষ্ট। চতুর্থ দফায় চাকা ঘুরবে, সেই আশাতেই এখন বুক বাঁধছেন বিজেপি নেতারা। অন্য দিকে ইন্ডিয়া জোটের আশা, চতুর্থ দফা বিজেপির হার নিশ্চিত করে তাদের জয়ের পথ আরও প্রশস্ত করবে।