মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে শোভাযাত্রায় শুভেন্দু অধিকারী ও ঝাড়গ্রাম লোকসভার প্রার্থী প্রণত টুড়ু। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম শহরে। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবারের ঘোষিত মনোনয়নের দিন পিছিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। তবে মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম লোকসভার পদ্মপ্রার্থী প্রণত টুডুর মনোনয়ন শোভাযাত্রায় চমক দিল গেরুয়া শিবির। ধামসা, মাদলের তালে শোভাযাত্রার আগে পিছে দেখে গেল বেশ কিছু লোকশিল্পীকে। যাঁদের বেশিরভাগই রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পের উপভোক্তা। বিজেপি সূত্রের অবশ্য দাবি, সরকারি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তদের অনেকেই বিজেপি সমর্থক। তেমনই কিছু শিল্পী এদিন শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। এদিনের কর্মসূচিতে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়ে গেলেন, ঝাড়গ্রাম তার নিজের জায়গা। এই আসনে জিততেই হবে।
এদিনের শোভাযাত্রায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাথায় গেরুয়া টুপি আর হাতে ‘মোদী পরিবারের’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাঁটতে থাকা সোমবারি হেমব্রম, মালতী মাহাতোরা বলছিলেন, ‘‘দেশের পরিবর্তনের স্বার্থে প্রার্থীর মনোনয়ন পর্বের শোভাযাত্রায় যোগ দিতে বান্দোয়ান থেকে এসেছি।’’ মিছিল শেষে পাঁচমাথা মোড় থেকে রওনা দেওয়ার আগে বিজেপির যুব মোর্চার নেতাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রে খবর, সেখানেই তিনি জানান, ঝাড়গ্রাম তাঁর নিজের এলাকা। জিততেই হবে এই আসন। পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম জেলায় এসএসসির ভুয়ো চাকরিপ্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন ঝাড়গ্রাম জেলায় আসতেন। পার্থ ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে ঝাড়গ্রাম জেলাতেও শাসক ঘনিষ্ঠ অনেকে এসএসসির চাকরি পেয়েছেন।
এদিন দুপুরে বেলা একটা নাগাদ আসেন শুভেন্দু। রঘুনাথপুরে মডেল রাস্তায় সিদো-কানহোর মূর্তিতে মালা দেন। তারপর শোভাযাত্রা শুরু হয়। মিছিলের প্রথম সারিতে ছিলেন বিজেপির মহিলা কর্মীরা। তারপর ধামসা-মাদল সহকারে বিভিন্ন লোকশিল্পীরা ছিলেন। ছিলেন ছৌ শিল্পীরাও। এছাড়াও মোদীর মুখোশ পরে ও বেলুন সহকারে মানুষজন ছিলেন। বিজেপির জেলা মিডিয়া সেলের কনভেনর প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘লোকপ্রসার প্রকল্পের যে সব শিল্পী আমাদের সমর্থক তাঁরাই শোভাযাত্রায় এসেছিলেন।’’
২০১৯-এর লোকসভা ভোট করিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা বিজেপির সভাপতি সুখময় শতপথী। তিনি বর্তমানে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য। এদিন মিছিলে হাঁটার সময় রীতিমতো প্রত্যয়ের সুরে সুখময় বললেন, ‘‘যাঁরা শোভাযাত্রায় এসেছেন সকলেই ঝাড়গ্রাম সংসদীয় এলাকার মানুষজন। তবে ঝাড়গ্রাম জেলার মানুষজনের সংখ্যা ছিল বেশি।’’ শোভাযাত্রা চলাকালীন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন শুভেন্দু। তমলুকে চাকরিহারাদের নিয়ে ধরনা কর্মসূচি চালাচ্ছে তৃণমূল। সেখানে অনশনও শুরু হয়েছে। সুবিচার না মিললে সেখান থেকে শুভেন্দু অধিকারী ও প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সেই নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এগুলো সব তৃণমূলের লোকজন। চাকরিপ্রার্থী নয়। আমার কাছে এলে আমি ভাল করে ওদের খাইয়ে দেব। ভুয়ো চাকরি দিয়ে টাকা তুলেছে। আমি ঝাড়গ্রামের লিস্ট প্রকাশ করে দেব, কারা ভুয়ো চাকরি করে।’’
এদিনের কর্মসূচি উপলক্ষে লাগানো বিজেপির পতাকা ঝাড়গ্রামের আগে পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘লড়াই জনগণের সঙ্গে মমতার প্রশাসন ও পুলিশের হচ্ছে। তৃণমূলের পতাকা আছে, বিজেপির পতাকা নেই। মানুষ ভাল করে জবাব দেবে। দু’দফাতে হেরেছে। পরের দফাতে রফাদফা হবে।’’ শুভেন্দু স্মরণ করিয়ে দেন, ‘‘জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনী ও হার্মাদ বাহিনী জব্দ করতে পারেনি। যত অত্যাচার যত পুলিশি অত্যাচার, হবে। জঙ্গলমহলের মানুষ ভোটের দিন সুদে আসলে ফেরত দেবে।’’