অসমের বরপেটায় ভোটপ্রচারে যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারে বসে ট্যাবেই সূর্য তিলকের মুহূর্ত দেখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
আগামী শুক্রবার প্রথম দফা ভোট। রামনবমীর উদ্দীপনাকে হাতিয়ার করে বিজেপি যখন হিন্দু ভোটের মেরুকরণে তৎপর, তখন কংগ্রেস শিবির বলছে, রাম সকলের। কিন্তু কিছু লোক ক্ষমতা ধরে রাখতে তাঁকে নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে।
বিজেপির লক্ষ্য ছিল, রামমন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দু ভোটের মেরুকরণে টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে আসা। কিন্তু মন্দির প্রতিষ্ঠার পর গত তিন মাসে উদ্দীপনা ফিকে হয়ে আসায়, রামনবমীকে কেন্দ্র করে সেই ভাবাবেগকে উস্কে দেওয়ার কৌশল নিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী নিজে আজ সকালে ছিলেন অসমের নলবাড়িতে। সেখানে জনসভায় রামমন্দির নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করেন তিনি। পরে একাধিক ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে দেখা যায়, বিমানে বসে হাতে ধরা ট্যাবলেটে রামলালার সূর্য তিলক অনুষ্ঠান দেখছেন তিনি। জুতো খুলে রেখে আসনে বসেই রামলালার মূর্তিকে প্রণাম করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। সামাজিক মাধ্যমে মোদী লেখেন, ‘নলবাড়ির সভার পরে রামলালার সূর্য তিলক দেখলাম। কোটি কোটি ভারতবাসীর মতোই এই ঘটনা আমার জন্য আবেগের বিষয়। অযোধ্যার এই রামনবমী ঐতিহাসিক। এই সূর্য তিলক যেন আমাদের জীবনে নতুন শক্তি ও দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।’’
বিরোধীরা বলছেন, বার্তা স্পষ্ট। প্রথম দফা ভোটের আগে দেশ জুড়ে যাতে ধর্মীয় ভাবাবেগের হাওয়া তৈরি হয় তার জন্য চেষ্টার কসুর করছেন না প্রধানমন্ত্রী। কারণ, গত দু’বারের মতো মোদী হাওয়া অনুপস্থিত। উল্টে বিরোধীদের দাবি, মানুষ মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনীতির বেহাল দশা, চাকরি না থাকা, ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। মানুষের সেই ক্ষোভকে চাপা দিতে এখন ধর্মীয় মেরুকরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘রাম নিজের প্রতিজ্ঞা পালনে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর সেই রামকে নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে নিজেদের প্রতিজ্ঞা ভুলে যাচ্ছেন।’’
পাল্টা বিজেপি শিবিরের মতে, যে বিরোধীরা রামমন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের আজ রামমন্দির বা রামনবমী নিয়ে মুখ খোলার কোনও অধিকার নেই। হিন্দু ভোট হাতছাড়া হচ্ছে বলেই এখন কংগ্রেস নেতাদের মুখে রাম-রাম উচ্চারিত হচ্ছে। ঘরোয়া ভাবে বিজেপি নেতারা বলছেন, প্রথম দফায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরপ্রদেশে আটটি আসনে ভোট হচ্ছে। ওই আটটি আসন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। গত বার ওই কেন্দ্রগুলিতে ভাল ফল করেছিলেন বিরোধীরা। এ বার যখন উত্তরপ্রদেশে দল সব ক’টি আসনে জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, তখন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলিতে ভাল ফল করতে হিন্দু ভোটের প্রবল মেরুকরণ প্রয়োজন। যা ভিন্ন ওই কেন্দ্রগুলিতে ভাল ফল করা কঠিন। বিজেপি জানে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যাদব-মুসলিম অধ্যুষিত ১৬টি আসনে দল যদি ভাল ফল করে, সমগ্র উত্তরপ্রদেশেই ভাল ফল হবে। যা তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফেরাকে অনেকটাই সহজ করে দেবে।
কংগ্রেস অবশ্য দাবি করছে, কৃষক থেকে শিক্ষিত যুবক, হিন্দু হোক বা মুসলিম—দেশবাসীর বড় অংশ এই সরকারের দশ বছরের কাজে ক্ষুব্ধ। শাসক দল না মানলেও, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার চোরাস্রোত সর্বত্র। সেই ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। ক্ষোভের সেই চোরাস্রোতই এ বার বিজেপির নৌকাকে ডুবিয়ে ছাড়বে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কথায়, ‘‘১৫-২০ দিন আগেও ভাবছিলাম, বিজেপি ১৮০টি আসন পাবে। এখন মনে হচ্ছে ১৫০টি আসন পেয়েই বিজেপি থেমে যাবে।’’