জুন মালিয়া। —ফাইল চিত্র।
মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়ার সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার সম্পর্ক শীতল। অজানা নয় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জেনেও জুনকে এ বার মেদিনীপুর লোকসভায় প্রার্থী করেছেন মমতা। মার্চের গোড়ায় মেদিনীপুরে এসেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। দলীয় বৈঠকে সুজয়কে মমতার নির্দেশ ছিল, ‘তুমি জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে।’ আর জুনকে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি সুজয়কে মিষ্টি খাইয়ে দিও!’
মার্চ ফুরনোর আগেই মিষ্টি বাতাবরণ। সুজয়ের বাড়ি গেলেন জুন। সেখানে চায়ে পে চর্চা অর্থাৎ চায়ের আড্ডা হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে খবর। দলের জেলা সভাপতির বাড়িতে প্রায় আধ ঘন্টা ছিলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী। তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যাডবেরি সেলিব্রেশন। স্বাদে- আহ্লাদে দলীয়স্তরে দু’জনের সম্পর্কের কি তাহলে নতুন সমীকরণ, জল্পনা মেদিনীপুরে। দলীয় সূত্রে খবর, দিন দুয়েক আগেই সুজয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন জুন। সন্ধ্যার পরপরই। দলের একাংশ কর্মীর অনুমান, মিষ্টি সংযোগ আরও নিশ্চিত করারই চেষ্টা করেছেন দলীয় প্রার্থী। জুন- সুজয়, কেউই অবশ্য ওই দিনের চায়ের আড্ডা নিয়ে তেমন কিছু বলতে নারাজ। জুন একাই গিয়েছিলেন। কাউকে সঙ্গে নেননি। এমনকি, তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত পুরপ্রধান সৌমেন খানকেও নয়। জুন আপনার বাড়িতে গিয়েছিলেন? সুজয়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘কে বলল?’ পরে সব শুনে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘সেদিন উনি বাড়িতে এসেছিলেন। এক কাপ চা খেয়ে গিয়েছেন আর কী!’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতির সংযোজন, ‘‘বাড়িতে এসেছিলেন। যে কেউই আমার বাড়িতে আসতে পারেন।’’ মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন? তৃণমূলের জেলা সভাপতির মন্তব্য, ‘‘এখানে মিষ্টি- টিষ্টির বিষয় ছিল না রে ভাই! ঘরে এসেছেন, বসেছেন, এক কাপ চা খেয়েছেন, কিছু কথা বলেছেন। সাধারণ ব্যাপার।’’
জুনের সঙ্গে সুজয়ের সম্পর্ক শীতল। আবার মেদিনীপুরে পুরপ্রধান সৌমেন খানের সঙ্গে ‘বিরোধ’ রয়েছে তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের। সৌমেন জুনের অনুগামী। বিশ্বনাথের পরিচিতি সুজয়ের অনুগামী হিসেবে। জুনকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মেদিনীপুরের প্রার্থী করেছিলেন মমতা। জিতে যান জুন। মেদিনীপুরের বিধায়ককে যে তিনি লোকসভায় প্রার্থী করবেন, সে ইঙ্গিত ক’মাস ধরে দিচ্ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। দলের এক সূত্রে খবর, গত জানুয়ারিতে কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে দলের জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠকে জুনের প্রশংসা করেছিলেন মমতা। দলনেত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে জুনদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতাদের। নানাভাবে ওই নেতাদের সতর্কও করেছেন মমতা। গত বছর শালবনিতে এসে দলীয় সভায় সুজয়ের উদ্দেশে মমতা বলেছিলেন, ‘‘জুন কিন্তু এলাকায় ঘোরে। সুজয়, তুমি জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। জুন আমাদের সাংস্কৃতিক মঞ্চের একটি মেয়ে। আর যদি না করো, আমাকে বাধ্য করো না ব্যবস্থা নিতে।’’
ভোট- যুদ্ধের প্রস্তুতিতে দলের নির্বাচনী কমিটি হয়েছে মেদিনীপুর শহরে। শহরে তৃণমূলের সভাপতি পদে রয়েছেন বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথ পুর- প্রতিনিধিও। কমিটির মাথায় (কনভেনর হিসেবে) অবশ্য তাঁকে রাখা হয়নি। কমিটির মাথায় রাখা হয়েছে সৌরভ বসুকে। জুনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত সৌরভও পুর- প্রতিনিধি। তিনি পুর-পারিষদও। জুন অবশ্য বারবারই দাবি করেছেন তাঁর সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয়ও শুনিয়েছেন, ‘‘দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁকে সামনে রেখে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভোট করতে হবে। দলের প্রার্থীকে জেতাতে হবে।’’
জুন যেদিন আপনার বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেদিন তো খড়্গপুর গ্রামীণের বড়কোলায় তৃণমূলের প্রচার কর্মসূচি ছিল, কর্মসূচি শেষেই গিয়েছিলেন নিশ্চয়ই? সুজয় মানছেন, ‘‘সেদিন বড়কোলায় আমাদের প্রচার কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচির পরে উনি বললেন, সুজয়দা, যাওয়ার সময়ে কী বাড়িতে একটু চা খেয়ে চলে যাব। আমি বললাম, চলে আসুন বাড়ি। আমি বাইকে গিয়েছিলাম। বাইকে ফিরেছি। আমি বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি এসেছিলেন।’’ নির্বাচনী প্রচারের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে নিশ্চয়ই? তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘কোন জায়গায় একটু সমস্যা আছে, কোন জায়গায় আরও একটু নজর দিতে হবে- এ সব নিয়েই কথা হয়েছে।’’ সুজয়ের বাড়িতে আসার আগে সেদিন খড়্গপুর গ্রামীণের প্রচার সভাতেও জুন শুনিয়েছেন, ‘‘শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- দিদিই আমাদের ভরসা। দিদি আছে, চিন্তা নেই।’’