Tarader Katha

তারাদের কথা: রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৯:০২
Share:

পারি না সইতে, না পারি কইতে

Advertisement

তুমি কি কুয়াশা? ধোঁয়া-ধোঁয়া-ধোঁয়া! রচনার হিরো প্রসেনজিতের লিপে একদা সুপারহিট এই গান গেয়েছিলেন কিশোর কুমার। এখন অবশ্য ধোঁয়া-ধোঁয়া-ধোঁয়া শব্দের নতুন আবহ রচনা করেছেন প্রাক্তন হিরোইন রচনা। হুগলি লোকসভার গণ্ডি ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য, এমনকি, দেশের বিভিন্ন বাঙালিটোলায়। মিমের বন্যা! রচনার মুখে লাগাম পরানো হয়েছে। রচনা কি এখন গানের প্রথম লাইনটি গাইছেন, ‘পারি না সইতে, না পারি কইতে!’

দিদি নম্বর ওয়ান টু দিদি নম্বর ওয়ান

Advertisement

এক জন রিয়্যালিটি শোয়ের সেটের দিদি। অন্য জন দলের দিদি। দিদি নম্বর ওয়ানের সেট থেকে দিদি নম্বর ওয়ানের দলে গিয়েছেন রচনা। জানুয়ারি মাসে নবান্নে গিয়ে বাংলার দিদির সঙ্গে দেখা করেছিলেন সেটের দিদি। বিচ্ছু লোকেরা তখন থেকেই রটাচ্ছিল, এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিট পাবেন রচনা। দেখা গেল, তারা ভুল বলেনি। হুগলির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ময়দানে রচনাকে নামিয়ে দিলেন মমতা। দিদি টু দিদি। লকেট বনাম রচনা। অভিনেত্রী বনাম অভিনেত্রী।

রবীন্দ্ররচনা বলি?

রচনার আসল নাম ঝুমঝুম বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালক সুখেন দাস সেলুলয়েডের জন্য তাঁর নাম বদলে রাখেন ‘রচনা’। ঠিকই করেছিলেন। ‘ঝুমঝুম’ নামের নায়িকার সফল হওয়া নিয়ে সিরিয়াস প্রশ্ন উঠতে পারত। যেমন ‘কুমার শানু’র ক্ষেত্রেও হতে পারত যদি তিনি ‘কেদারনাথ’ থেকে যেতেন। ১৯৯১ সালে ‘মিস ক্যালকাটা’ হয়েছিলেন ১৯ বছরের ঝুমঝুম। তখনই সুখেনের নজরে পড়ে যান তিনি। সুখেনের পরবর্তী ছবি ‘দান প্রতিদান’-এ আবির্ভূতা হন ‘রচনা’। রচনা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবার নাম রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা-মেয়েকে একসঙ্গে ‘রবীন্দ্ররচনা’ বলা যেতে পারে, নাকি?

বঙ্গ থেকে কলিঙ্গে

অসংখ্য বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন রচনা। পাশাপাশিই কাজ করেছেন প্রায় ৫০টি ওড়িয়া ছবিতেও। কলিঙ্গে কাজ করতে করতেই বঙ্গতনয়ার পরিচয় ওড়িয়া ছবির নায়ক সিদ্ধান্ত মোহান্তির সঙ্গে। এক সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজও করেন তাঁরা। ছবির রোমান্টিক সংলাপ ছড়িয়ে যায় জীবনেও। রচনা-সিদ্ধান্ত বিয়ে করেন। কিন্তু তা টেকেনি। ২০০৪ সালে সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় রচনার।

পতী, পত্নী অওর রাজনীতি

সামাজিক ভাবে সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল রচনার। কিন্তু তাঁদের জুড়ে দিল রাজনীতি। দুই প্রাক্তন পতি এবং পত্নীই এখন সক্রিয় রাজনীতিতে। সিদ্ধান্ত অনেক দিন ধরেই রাজনীতিতে রয়েছেন। বিজু জনতা দলের সাংসদও ছিলেন। কিন্তু এই লোকসভা ভোটের মুখে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। ওড়িশার ভোটে টিকিটও পেয়েছেন। তবে বিধানসভা ভোটে। ফলে রাজনীতি জুড়ে দিয়েছে বটে। কিন্তু দূরত্ব তাতেও থাকবে। রচনা লোকসভা ভোটে প্রার্থী। সিদ্ধান্ত বিধানসভা ভোটে। দু’জনে জিতে গেলেও দেখা হওয়ার সুযোগ নেই।

যোগ-বিয়োগ-যোগ-বিয়োগ

সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে এক দশকেরও বেশি সময় একাই ছিলেন রচনা। পরে প্রবাল বসুকে বিয়ে করেন। যদিও ২০১৬ সাল থেকে এক ছাদের নীচে থাকেন না রচনা-প্রবাল। তাঁদের একমাত্র পুত্র প্রণীল।

লগে রহো রচনাবেন

ঘটনাচক্রে, রচনার জন্ম ১৯৭২ সালের ২ অক্টোবর। অর্থাৎ, গান্ধীজয়ন্তীর দিন। পড়াশোনা কলকাতার ন্যাশনাল গার্লস স্কুলে। তার পরে সাউথ সিটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বলেই জানান তাঁর পরিচিতেরা। তবে নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ। তাতে অবশ্য রচনার জীবন থেমে যায়নি। অভিনয়ে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। তার পরে সঞ্চালক হিসেবে শো সুপারহিট করিয়েছেন। অতঃপর রাজনীতির আঙিনায়। ব্যক্তিগত জীবনে যত বিপর্যয়ই আসুক, কাজের দুনিয়ায় কোনও ছাড়াছাড়ি নেই!

বোল বচ্চন

বাংলার প্রায় সমস্ত হিরোর সঙ্গেই কাজ করেছেন রচনা। তার পাশাপাশিই স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও এক ছবিতে অভিনয় করেছেন রচনা। ছবির নাম ‘সূর্যবংশম’। বাংলার নায়িকাদের মধ্যে রচনাই সম্ভবত দক্ষিণের ছবিতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। বাংলা ছবির পাশাপাশি বেশ কিছু তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।

সবুজের সাথী

বাংলায় প্রায় সমস্ত বড় হিরোর সঙ্গেই কাজ করেছেন। তবে রচনার উল্লেখযোগ্য ‘হিট’ সিনেমাগুলির মধ্যে অন্যতম ২০০৩ সালের ‘সবুজসাথী’। সে ছবিতে প্রসেনজিতের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রচনা। কী আশ্চর্য, সেই ছবি মুক্তির আট বছর পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরকার ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার প্রকল্প চালু করবে। নাম ‘সবুজসাথী’! রচনা অবশ্য মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গেও ছবিতে অভিনয় করেছেন। সে এক ‘তুলকালাম’ কান্ড!

রিয়েল রিয়্যালিটি

২০১৯ সালে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে হারের ময়নাতদন্তে বসে তৃণমূল দেখেছিল, মূলত গোষ্ঠীকোন্দলই তাদের ডুবিয়েছে। সেই কারণেই মমতা এ বার প্রথাসিদ্ধ রাজনীতির বাইরের জগৎ থেকে রচনাকে এনে হুগলিতে দাঁড় করিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, ইহাই আসল সত্য। রিয়েল রিয়্যালিটি। হতে পারে। কারণ, গোড়া থেকেই দেখা যাচ্ছে জেলা তৃণমূলের সব পক্ষ ঐক্যরচনা করে ভোটের ময়দানে নেমেছে। বেচারাম মান্না, তপন দাশগুপ্ত, অসিত মজুমদার, অসীমা পাত্র, অরিন্দম গুঁইনেরা রচনাকে জেতাতে জান লড়িয়ে দিচ্ছেন।

ছাঁকনি নম্বর ওয়ান

রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা হওয়ায় একটু বেশি কথা বলে ফেলছিলেন প্রথম দিকে। রচনার বাক্যরচনার প্রবাহে চাপে পড়ে যায় তৃণমূল। জরুরি ভিত্তিতে কলকাতা থেকে হুগলিতে পাঠানো হয় প্রতিনিধিদল। তারা নিরন্তর ‘রাজনীতিক’ রচনাকে তৈরি করছে। রচনার বচনে তারা ছাঁকনি বসিয়েছে। অর্থাৎ, কী বলতে হবে এবং কী বলতে হবে না। চশমা পরতে হবে কি হবে না। পোশাক কেমন থাকবে। ফিচেল সাংবাদিকদের কূট প্রশ্ন কী ভাবে (তাঁর বিখ্যাত প্রায় অট্টহাস্যটি না-হেসে) এড়িয়ে যেতে হবে। ওই পরামর্শদাতাদের দল যাওয়ার পর থেকে রচনা ‘নতুন’ রচনা লিখছেন।

রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement