Tarader Katha

তারাদের কথা: নরেন্দ্র মোদী

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ১৬:০২
Share:

এক্স ইকুয়্যাল্‌স টু প্রেম, পিএম ইকুয়্যাল্‌স টু পরমেশ্বর!

Advertisement

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! তিনি মনে করেন, স্বয়ং ঈশ্বর তাঁকে এ ধরাধামে পাঠিয়েছেন। তিনি পরমেশ্বরের প্রেরিত দূত। আর তাঁর বাহিনী এবং বিজেপির আইটি সেল প্রমাণ করতে মরিয়া যে, পিএম= পরমেশ্বর। যেমন এক্স= প্রেম। ২০২৪ সালের ভোটের প্রচারে তিনি আগামী ২৩ বছরের দিশা দেখাতে চেয়েছেন। কারণ, ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষ। সেই সময়ের ভারত কোথায় পৌঁছবে, কী তাঁর ভাবনা, সে সব দেশভক্তির মোড়কে মুড়ে বিলিয়ে দিচ্ছেন অকাতরে।

ফরেন্দ্র মোদী!

Advertisement

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! গত ১০ বছরে মোদীর বিদেশ সফর (ফরেন ট্যুর) নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদী’ থেকে উনি ‘ফরেন্দ্র মোদী’ হয়ে গিয়েছেন! তবে বিজেপি সে সবের তোয়াক্কা করেনি। মোদীভক্তেরাও পাত্তা দেননি। বরং তাঁরা বলেছেন, ভারতের বিদেশনীতিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন মোদী। রেওয়াজ ভেঙে ইজ়রায়েলের সঙ্গে সখ্য বাড়িয়েছেন। মার্কিন মুলুকে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে ‘ইস বার ট্রাম্প সরকার’ বলে প্রচারও করে এসেছেন। তাতে কী, যে ট্রাম্প হেরে গিয়েছিলেন!

ইন্ডি-পিন্ডি কথা!

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! তিনি কিছুতেই বিরোধী জোটকে ‘ইন্ডিয়া’ বলবেন না। বলবেন ‘ইন্ডি’। বা ‘ইন্ডি জোট’। মোদীর ভরসা ‘ভারত’। বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হওয়ার পরেই বিভিন্ন সরকারি জায়গায় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’ শোভা পাচ্ছিল। যদিও পরে তা থেমে যায়।

রাম নাম সত্য হ্যায়!

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! তিনি জানেন ‘রাম আমার বস্তা বয়’ (রামাইয়া বস্তাওয়াইয়া গানটি স্মর্তব্য)! ২০১৪ সালে সরকারে আসার পর থেকে অতি-গতির সংস্কারের পথে হেঁটেছেন মোদী। ২০১৬ সালে নোটবন্দি, জিএসটি চালু করার মতো পদক্ষেপ প্রথম পাঁচ বছরে। পরের পাঁচ বছরে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করানো। তা চালুও হয়ে গিয়েছে। নতুন রামমন্দিরের উদ্বোধন বাকি ছিল। সে-ও লোকারণ্য এবং মহা ধুমধামে হয়ে গিয়েছে। ভূমিপূজনও তিনিই করেছিলেন। তা-ও আবার ভরা কোভিডের সময়ে। তিনি মনে করেন, রামই উতরে দেবেন। রামেই তাঁর বস্তা বয়।

বন্ড, দ্য নেম ইজ় বন্ড, ইলেক্টোরাল বন্ড!

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! তিনি মোটেই মানবেন না যে, তাঁকে ভোটের মুখে-মুখে একটি ধাক্কা খেতে হয়েছে। মোদী-প্রণীত নির্বাচনী বন্ডকে ‘বেআইনি এবং অসাংবিধানিক’ বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশে কোন সংস্থা, কোন দলকে, কবে, কত টাকা দিয়েছে, তার হিসাব প্রকাশ করতে হয়েছে। তবে এর আগেও তিনি পিছু হটেছেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল তিনটি ‘বিতর্কিত’ কৃষি আইন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ট্রাকচালকদের আন্দোলনের মুখে ‘ন্যায় সংহিতা’র নির্দিষ্ট একটি ধারা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল মোদীর সরকার।

পূব হাওয়াতে দেয় দোলা!

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! ২০২১ সালের বিধানসভায় ‘অব কি বার দোসো পার’ বলেও বাংলায় ৭৭-এ আটকে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও বলেছেন, ৩ থেকে বাংলায় বিজেপির বিধায়কের সংখ্যা ৭৭-এ পৌঁছেছিল। খারাপ কী? বলেছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সারা দেশের মধ্যে বিজেপি সেরা ফল করবে বাংলায়। ২০১২ সাল থেকে বিজেপি স্লোগান দিয়েছিল ‘পুবে তাকাও’। সেই মতো পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করেন মোদী। বিহার, ঝাড়খণ্ডে জমি শক্ত করেছে বিজেপি। কিন্তু বাংলায় এসে আটকে গিয়েছিল তাঁর অশ্বমেধের ঘোড়া।

দখিন দুয়ার খোলা!

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! আসন বাড়াতে হবে। এ বারের ভোটে মোদীর ‘পাখির চোখ’ দক্ষিণ ভারত। হুট বলতেই চলে যাচ্ছেন বিন্ধ্য পর্বত পেরিয়ে দাক্ষিণাত্যে। তামিলনাড়ু, কেরল, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসন চাই! যে করেই হোক। হোক না সে যে কোনও লোক। গত এক বছরে মোদী যত বার দক্ষিণের দরজা পেরিয়েছেন, আগের ন’বছরে তা দেখা যায়নি। প্রচারের শেষে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ শিলায় গিয়ে চক্ষু মুদে ধ্যানেও বসেছেন।

রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে!

যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কী আসে-যায়! গত ১০ বছরের শাসনকালে মোদী সর্বত্র বিরাজমান থেকেছেন। রণে (পুলওয়ামার পর বালাকোটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করে বার্তা), বনে (আফ্রিকা থেকে আনা চিতাকে নিজে হাতে বনে ছেড়েছিলেন), জলে (ডুবুরির পোশাকে নেমেছেন সমুদ্রের গভীরে) এবং জঙ্গলে (জাঙ্গল সাফারিতে ক্যামেরা বাগিয়ে ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি করেছেন। দুষ্টু লোকেরা অবশ্য বলে, মোদী কী ছবি তুলেছেন তা না দেখা গেলেও মোদীর ছবি তোলার ছবি দেখা গিয়েছে)।

রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement