কুপার্স শহরে প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী। ছবি সুদেব দাস।
গত লোকসভার ফলের নিরিখে কুপার্স শহরে এগিয়েছিল বিজেপি। ২০২১- এর বিধানসভায় অবশ্য বিজেপিকে পেছনে ফেলে দেয় তৃণমূল। এবার লোকসভায় কুপার্সের ফলের উপর তাই অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী দিনে এই পুরসভার বোর্ড কাদের দখলে থাকবে। আর সেই কারণেই শহরের ভোট নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া দুই ফুল।
উদ্বাস্তু মানুষের স্বার্থে ১৯৯৭ সালে তৈরি হয় কুপার্স পুরসভা। দীর্ঘদিন এই শহর ডানপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় বিজেপি। সেই সময় বিজেপিপ ভোট ছিল ৬৮০০। তৃণমূলের ৫৮০৮। জানা গিয়েছে, ওই সময় পুরসভার ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় আবার পাঁচশোর বেশি ভোটে এই শহরে এগিয়েছিল তৃণমূল।
২০১৭ সালের অগস্ট মাসে এখানে পুরনির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনে তৃণমূল ১২টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয়। প্রায় দেড় বছর আগে পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও আর নতুন করে নির্বাচন হয়নি। প্রশাসক হিসেবে রানাঘাটের মহকুমা শাসক পুরসভার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। শহরে প্রায় ২২ হাজারের বেশি ভোটার রয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের সমর্থন কোন দিকে থাকবে সে দিকেই নজর রাখছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক মহলের অনেকেপই ধারণা, এবারের নির্বাচনে কুপার্সের মানুষ যেদিকে সমর্থন
জানাবেন, আগামী পুরসভা নির্বাচনে সেই রাজনৈতিক দলেরই পুরবোর্ড গঠনের সম্ভাবনা বেশি। এই সহজ অঙ্ক থেকেই বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই এখন কুপার্সের ভোটাদের নিজের দিকে টানতে পুরোদমে প্রচারে নেমেছে।
রবিবার বিকেলে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে ভোট প্রচার করেন তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী। প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন রানাঘাট সংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়, কুপার্স শহর তৃণমূল সভাপতি দিলীপকুমার দাস প্রমুখ।
মুকুটমণি বলেন, "এই শহরের মানুষের সঙ্গে আগেও আমার যোগাযোগ ছিল। এখানকার উন্নয়ন আগামী দিনে যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্যই মানুষ এবারও তৃণমূলকে ভোট দেবে।"
রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার বলেন, "যিনি তৃণমূলের প্রার্থী, তিনি এতদিন রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন। কুপার্স ওই বিধানসভার মধ্যেই পড়ে। বিধায়ক থাকাকালীন তাঁকে এলাকায় দেখা যায়নি। সুতরাং মানুষ তৃণমূলের প্রার্থীকে কখনওই ভোট দেবে না।"
প্রসঙ্গত, দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা উদ্বাস্তু মানুষদের জন্য একটা সময় এখানে শিবির করা হয়েছিল। বাসিন্দাদের অনেকের হাতেই উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর থেকে নিঃশর্ত জমির দলিল তুলে দেওয়া হয়। গত নির্বাচনগুলিতে এখানকার বাসিন্দাদের সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এবারেও ভোটের প্রচারে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানকার মানুষের ভোট কার ঝুলি ভরবে, তার হিসেব কষতে শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। হিসেব কযছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও।