মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ। —ফাইল চিত্র।
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কমল নাথের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা দানা বেঁধেছে শনিবার থেকে। পুত্র তথা কংগ্রেস সাংসদ নকুল নাথকে সঙ্গে নিয়ে শনিবারই তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন। নকুল আবার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে ‘কংগ্রেস’ পরিচয়ও মুছে দিয়েছেন। যাতে তাঁদের দলবদলের জল্পনা আরও জোরালো হয়। কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন কমল, তা নিয়েও চর্চা চলছে।
ইন্ডিয়া টুডে একটি সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, কংগ্রেসের কাছে নিজের ‘মনোবাঞ্ছা’র কথা জানিয়েছিলেন কমল। কিন্তু রাহুল গান্ধীরা তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ করেননি। তার পরেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কমল ভাবনাচিন্তা শুরু করেন।
দলের কাছে কী চেয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী?
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্যসভায় যেতে চেয়েছিলেন কমল। রাজ্যসভার টিকিট চেয়েছিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু তাঁকে সেই টিকিট দেওয়া হয়নি। এতেই ‘মনোমালিন্য’ হয়। সূত্রের খবর, কমলকে খুশি করতে আগ্রহও দেখাচ্ছে না কংগ্রেস। তাঁর উপর শীর্ষ নেতৃত্ব খুব একটা সন্তুষ্ট নন। কারণ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কমলকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সরকার পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারেনি। তার জন্য দলের অন্দরে কমলকেই দায়ী করা হচ্ছে। এর পরেও তাঁকে বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে দলের মুখ করা হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। অভিযোগ, বাইরে থেকে কোনও নেতাকে পাঠানো হলে কমল তাঁর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারতেন না। এই অনড় মনোভাবের কারণেও তাঁর উপর দলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কমল। তাঁর কাছে রাজ্যসভার টিকিট চেয়েছিলেন। এমনকি, রাজ্যসভার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নাকি তিনি বিধায়কদের সমর্থনও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর ইচ্ছা পূরণে আগ্রহ দেখায়নি।
শনিবার দিল্লি পৌঁছে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা খোলসা করে না বললেও জল্পনা একেবারে উড়িয়ে দেননি কমল। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা এত উত্তেজিত হচ্ছেন, আমি হচ্ছি না। এ রকম কিছু ঘটলে আপনাদেরই প্রথম জানাব।’’
রাহুলের পিতামহী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ছিন্দওয়াড়ার সাংসদ হয়েছিলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী কমল। ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় একটানা সাংসদ (মাঝে ১৯৯৬-’৯৮ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন না) কমল কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন একাধিক বার। একদা ‘সঞ্জয় গান্ধীর অনুগামী’ বলে পরিচিত হলেও পরবর্তী সময়ে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঠাঁই পেয়েছেন। বিজেপি শিবিরের দাবি, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করায় ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়েছে মধ্যপ্রদেশে। সেই কারণেই ‘হাত’ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে সে রাজ্যে। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের অন্দরেও কমল ‘নরম হিন্দুত্ববাদী’ বলেই পরিচিত। গত বছর মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির বিরুদ্ধে ‘হিন্দু বিরোধী’ মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় কমলের আপত্তির জেরেই ভোপালে ‘ইন্ডিয়া’র পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস হাইকমান্ড।
গত বছর মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝড়ে কার্যত ‘উড়ে গিয়েছিল’ কংগ্রেস। ২৩০ আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ১৬৩টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৬টি আসন। তার পরেই দলের অন্দরে কমলকে কোণঠাসা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে কমলকে সরিয়ে বসানো হয়েছিল তাঁর ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত জিতু পাটোয়ারিকে। এমনকি, বিরোধী দলনেতার পদও তাঁকে দেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড।