কমল নাথ। ছবি: পিটিআই।
ছেলে নকুল নাথকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কমল নাথ? দিনভর এই জল্পনার মাঝেই শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই বিজেপিতে তাঁর সপুত্র যোগদানের জল্পনা আরও জোরালো হয়। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্টই বললেন, ‘‘এ রকম কিছু ঘটলে আপনাদেরই প্রথম জানাব।’’ তবে এক বারও দলবদলের জল্পনা উড়িয়ে দেননি কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা।
শনিবার সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ‘কংগ্রেস’ পরিচয় মুছে ফেলেন কমলের ছেলে নকুল। তার পরেই জোরালো হয় জল্পনা। তবে কি মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণের পথে হাঁটছেন কমল? যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে? এর পরেই দিল্লি পৌঁছে কমল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটা নাকচ করার বিষয় নয়। আপনারা বলছেন, আপনারাই উত্তেজিত হচ্ছেন। এ পক্ষ বা ও পক্ষ, আমি উত্তেজিত হচ্ছি না। কিন্তু এ রকম কিছু হলে আমি প্রথম আপনাদেরই জানাব।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, দিল্লিতে গিয়ে এখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়নি কমলের। বিজেপির মধ্যপ্রদেশ সভাপতি ভিডি শর্মাকে ইতিমধ্যেই বলতে শোনা গিয়েছে, কমল তাঁদের দলে যোগ দিতে চাইলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। এর আগে সমাজমাধ্যমে কমল এবং তাঁর ছেলের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন বিজেপির মুখপাত্র নরেন্দ্র সালুজা। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘‘জয় শ্রীরাম’’।
কংগ্রেস নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ জানান, শুক্রবার রাতেই কমলের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। জল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি নেহরু-গান্ধী পরিবারের সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছেন, তিনি যে দল ছাড়বেন, কী করে আশা করব?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের এ ধরনের বিষয় আশা করা উচিতও নয়।’’ কমলের দলত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের মধ্যপ্রদেশ সভাপতি জিতু পাটোয়ারি। তিনি জানান, এ সব ‘ভিত্তিহীন’ কথাবার্তা। তিনি এ-ও মনে করিয়ে দেন যে, ১৯৭০ সাল থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন কমল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর সঙ্গে দেহরাদূনের দূন স্কুলে পড়াশোনা করতেন। দু’জনের বন্ধুত্ব কংগ্রেসের অন্দরে কারও অজানা ছিল না। জিতু এ-ও বলেন, ১৯৮০ সালে কমল যখন প্রথম বার নির্বাচনে লড়েছিলেন, তখন তাঁকে ‘তৃতীয় পুত্র’ বলেছিলেন ইন্দিরা। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা ভাবতে পারেন যে, ইন্দিরার তৃতীয় পুত্র কংগ্রেস ছাড়বে?’’
কমলের দল ছাড়ার জল্পনার মাঝেই সমাজমাধ্যমে নিজের প্রোফাইল থেকে ‘কংগ্রেস’ পরিচয় মুছে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের আর এক বিধায়ক সজ্জনসিংহ বর্মা। তিনি কমলের ‘অনুগামী’ হিসাবে পরিচিত। কংগ্রেসের একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজ্যসভার প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সজ্জন। কংগ্রেস মেনে নেয়নি। তাই বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, নতুন দলে গিয়ে নিজের জায়গা পাকা করার জন্য কমলকে এখন থেকেই ‘হাতে রাখার’ চেষ্টা করছেন বলেও দলের একাংশ মনে করছেন।
কমল কেন কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন? দলের একাংশ মনে করছেন, মধ্যপ্রদেশ থেকে কমলকে রাজ্যসভার প্রার্থী করেনি কংগ্রেস। সেই রাগেই এ সব করছেন। যদিও জিতু সেই দাবি মানেননি। তিনি জানিয়েছেন, কমল নিজেই রাজ্যসভার প্রার্থীর জন্য অশোক সিংহের নাম প্রস্তাব করেছেন। অশোক মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পেশ করেছেন।
দলের অন্য একটি অংশ মনে করছেন, গত নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর থেকে দলে কোণঠাসা হচ্ছিলেন কমল। এ রকম অভিযোগ উঠেছে। এর পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে কমলকে সরিয়ে বসানো হয়েছিল তাঁর ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত জিতুকে। এমনকি, বিরোধী দলনেতার পদও তাঁকে দেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড। এর নেপথ্যে দিগ্বিজয়ের হাত দেখেছেন কমলের অনুগামীরা। এ বার কি সেই কারণেই তবে চহ্বাণের মতো বিজেপির পথে? যেমনটা চার বছর আগে করেছিলেন মধ্যপ্রদেশের আর এক হেভিওয়েট নেতা জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে!