(বাঁ দিকে) নকুল নাথ এবং কমল নাথ। — ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের পর এ বার কি মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসে ধস নামতে চলছে? শনিবার এই জল্পনা উস্কে দিলেন সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের পুত্র তথা কংগ্রেস সাংসদ নকুল নাথ। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে ‘কংগ্রেস’ পরিচয় মুছে দিয়েছেন তিনি। চলতি সপ্তাহেই কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণ। এ বার সপুত্র কমলও সেই পথ অনুসরণ করতে পারেন বলে জল্পনা মধ্যপ্রদেশ রাজনীতিতে। শনিবার বিকেলেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন কমল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের ১২ জন কংগ্রেস বিধায়কও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই মধ্যপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি বিডি শর্মা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে বেশ কয়েক জন নেতা তাঁদের দলে যোগ দিতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিজেপিতে কেউ আসতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব।’’ গত এক সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশে দীনেশ আহিরওয়ার, রাকেশ কাটারের মতো প্রভাবশালী নেতার দল ছেড়েছেন। কমল দল ছাড়লে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের কাছে তা বড় ধাক্কা হবে নিশ্চিত ভাবেই।
কমলের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা তৈরি হতেই বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোন তথা দলের আইটি সেলের অন্যতম সদস্য অদিতি গায়েন এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে লেখেন, ‘‘বহু পুরনো কংগ্রেস মানেই নতুন বিজেপি।’’
রাহুলের পিতামহী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ছিন্দওয়াড়ার সাংসদ হয়েছিলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী কমল। ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় একটানা সাংসদ (মাঝে ১৯৯৬-’৯৮ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন না) কমল কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন একাধিক বার। একদা ‘সঞ্জয় গান্ধীর অনুগামী’ বলে পরিচিত হলেও পরবর্তী সময়ে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঠাঁই পেয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে দেড় দশক পরে ভোপালে ক্ষমতায় দলকে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন কমল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মধ্যপ্রদেশের ২৯টি আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছিল কংগ্রেস। কমলের খাসতালুক ছিন্দওয়াড়ায় তাঁর পুত্র নকুল।
বিজেপি শিবিরের দাবি, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করায় ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়েছে মধ্যপ্রদেশে। তা আঁচ করেই ‘হাত’ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে সে রাজ্যে। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের অন্দরেও কমল ‘নরম হিন্দুত্ববাদী’ বলেই পরিচিত। গত বছর মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির বিরুদ্ধে ‘হিন্দু বিরোধী’ মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় কমলের আপত্তির জেরেই ভোপালে ‘ইন্ডিয়া’র পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস হাইকমান্ড।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিজেপি ঝড়ে কার্যত ‘উড়ে গিয়েছিল’ কংগ্রেস। ২৩০ আসনের বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি পেয়েছে ১৬৩টি আসন। অন্য দিকে, কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৬টি আসন। তার পরেই দলের অন্দরে কমলকে কোণঠাসা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে কমলকে সরিয়ে বসানো হয়েছিল তাঁর ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত জিতু পাটোয়ারিকে। এমনকি, বিরোধী দলনেতার পদও তাঁকে দেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড।
কমলের অনুগামীরা এ ক্ষেত্রে দুষেছিলেন আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহকে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সদর দফতরে দু’গোষ্ঠীর সংঘর্ষও হয়েছিল। চার বছর আগে জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে বিজেপিতে যাওয়ার পরে গোয়ালিয়র-চম্বল অঞ্চলে ধস নেমেছিল কংগ্রেসে। এ বার কি মধ্যপ্রদেশে দলের সবচেয়ে মজবুত ঘাঁটি মহাকোশলের পালা?