সৌগত রায়। —ফাইল ছবি।
পানিহাটি পুরসভার নাগরিক পরিষেবা তলানিতে। যা নিয়ে লোকসভা ভোট ঘোষণার আগে থেকেই সরব বাসিন্দারা। ‘বিরক্ত’ খোদ শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের একাংশও। এরই মধ্যে সম্প্রতি ভোট-প্রচারে এসে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তিন বারের সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
যা শুনে বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, বর্ষীয়ান ওই সাংসদ দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছেন। আর সৌগত বলছেন, ‘‘বিরোধীদের তো কোনও দায়িত্ব নেই। ওঁরা শুধু অভিযোগই করতে পারেন।’’ সম্প্রতি পানিহাটিতে এসে সৌগত দাবি করেন, সোদপুরে বড় বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়েছে। শপিং মল, রেস্তরাঁ গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি, পানিহাটির জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় পাঁচ লক্ষ বাসিন্দাকে নাগরিক পরিষেবা দেওয়া পুরসভার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আসলে ভোট লুটেরার দল পুরসভাকে পঞ্চায়েত বানিয়ে ফেলেছে। রাস্তা, জল, নিকাশি, জঞ্জাল অপসারণ— সবই হোঁচট খাচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার তো সৌগতবাবুদের। যখন পুরসভা পরিষেবা দিতে পারছে না, তখন পানিহাটিকে পুর নিগম কেন করলেন না?’’
প্রাক্তন সাংসদের এমন মন্তব্যে হতাশ পানিহাটির বাসিন্দারাও। তাঁদের বড় অংশের অভিযোগ, আকাশে মেঘ দেখলেই জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়, ভাগাড়-সমস্যার সমাধান আজও হয়নি, তীব্র গরমে পানীয় জল কোনও মতে দিনে এক বার মিললেও, তা অত্যন্ত ক্ষীণ ধারায় পড়ছে। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে পানীয় জল নিয়ে ক্ষোভের কথা শুনতে হচ্ছে পুরপ্রতিনিধিদেরও। তাঁদেরও অনেকে ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, ‘‘ভোট চাইতে গেলেই তো জল চাইছে। কী উত্তর দেব?’’ এ দিকে, সৌগতের দাবি, গত ১৫ বছরে তিনি পানিহাটিতে ৪০০ কোটি টাকার জল প্রকল্প করেছেন। তবে তাতেও সমস্যা না মেটার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘আরও একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পুরসভার তো এত তহবিল নেই। এর জন্য রাজ্য বা কেন্দ্রের তহবিল প্রয়োজন।’’
২০১৩ থেকে পানিহাটি পুরসভা তৃণমূলের দখলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে পুরসভা সেই মতো আগাম পরিকল্পনা করেনি কেন? সৌগতের বক্তব্য, ‘‘মানুষকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’’ দু’-তিনটি ওয়ার্ডের ছোটখাটো কয়েকটি কাজ বাদ দিলে পানিহাটিতে শেষ পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিলের টাকায় কী বড় কাজ হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। শাসকদলেরই দুই গোষ্ঠীর পুরপ্রতিনিধিদের নিয়ে সাংসদ বৈঠক করার পরেও প্রায় চার মাস পুরসভা কার্যত অচল হয়ে থাকে কী ভাবে, সিপিএম-বিজেপি সেই প্রশ্নও তুলছে। এ দিন বিজেপির প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘‘সৌগতবাবুর বয়স হয়েছে। তাই কী বলছেন, নিজেও জানেন না। এ হেন মন্তব্যের মাধ্যমে উনি নিজের অপদার্থতার পাশাপাশি ওঁদেরই রাজ্য সরকার যে অযোগ্য, সেটাও তুলে ধরলেন।’’