মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফেসবুক।
রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কেউ কেউ সরাসরি ‘রাজনীতি’ করছেন বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর ওই মন্তব্যের পাল্টা ‘ইমামদের রাজনীতি’ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শনিবার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের সমর্থনে গোঘাটে সভা ছিল মমতার। সেই মঞ্চে সিপিএম জমানায় গোঘাটে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তৃণমূলনেত্রী। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ওই সময়ে সিপিএমের হাতে ‘আক্রান্তদের’ সাহায্যার্থে কামারপুকুরের রামকৃষ্ণ মিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন মমতা। তার পরেই মমতা এখনকার সাধুসন্তদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হন।
তৃণমূলনেত্রী বলেন, “সব সাধু সমান হয় না। সব স্বজন সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের একজন মহারাজ আছেন। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ডাইরেক্ট পলিটিক্স করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কারা রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন, তা তাঁর চিহ্নিত করা রয়েছে বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘আমি আইডেন্টিফাই করেছি কে কে করেছেন। আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে কী হেল্প করিনি! সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধিকার নিয়ে... তখন কিন্তু আমি পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। মা-বোনেরা আসত। তারা তরকারি কেটে দিত। সিপিএম কিন্তু আপনাদের কাজ করতে দিত না।’’
‘দিল্লির আজ্ঞাবহ’ হিসেবে মহারাজদের একাংশ কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে। বলে, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু-সন্তেরা এই কাজ? রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই সম্মান করে। ওদের কাছে একটা হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ওদের যারা মেম্বার হয়, দীক্ষা নেয়, তারা আছে। তাদের আমি ভালবাসতে পারি। আমি দীক্ষা নিতে পারি। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনও দিনও। এটা আমি জানি। তা হলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব?’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘কেউ কেউ ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করছে। সবাই নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িটাই থাকত না, আপনাদের এই মেয়েটা যদি না থাকত।” এর পরেই মমতা বলেন, কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটে মাফিয়াদের হাত থেকে তিনি কী ভাবে রক্ষা করেছিলেন।
রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের নাম করে মমতার আক্রমণের পাল্টা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘‘ইমামেরা আবেদন করতে পারেন আর কার্তিক মহারাজ প্রতিবাদ করলে অসুবিধা? বিজেপির কোনও মঞ্চে তাঁরা ছিলেন না। তাঁরা এখানে (বাংলায়) সনাতন হিন্দুদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ করেন।’’ পাশাপাশিই শুভেন্দু মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ‘বিদ্বেষমূলক’ মন্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি নূপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করে আর উনি হুমায়ুন কবীরের কথা চুপ করে শোনেন।’’ উল্লেখ্য, হুমায়ুনের সংশ্লিষ্ট মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন তাঁকে শোক়জ় করেছিল।