কাঁথির অলিগলিতে ঘুরলেই চোখে পড়ছে নানা মজাদার ছড়া। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভার ঢঙ্কা বেজেছে। শুরু হয়েছে ভোট-প্রচার। এই প্রচারে ছড়া-ছবির বই যেন উঠে এসেছে বাড়ির দেওয়াল বা পাঁচিলে। বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে এবং ছন্দ মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি আক্রমণ করছে এক অন্যকে। লোকসভার গুরু গম্ভীর আবহে যা পড়ে অল্প হলেও হাসি ফুটছে আমজনতার মুখে।
পূর্ব মেদিনীপুরে রয়েছে দু’টি লোকসভা কেন্দ্র— তমলুক এবং কাঁথি। এছাড়া, জেলার দু’টি বিধানসভা এলাকা মেদিনীপুর এবং ঘাটাল কেন্দ্রের অন্তর্গত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের এলাকা কাঁথির অলিগলিতে ঘুরলেই চোখে পড়ছে নানা মজাদার ছড়া। কোনওটায় বিজেপির কর্মীরা লিখেছেন— ‘বাংলার মানুষ চাইছে তাই/ হীরক রানি বাই বাই’। ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর/ তৃণমূলের সবাই চোর’। আবার কোনওটাতে তৃণমূল কটাক্ষ করেছে কেন্দ্রের গেরুয়া শিবিরকে। তারা লিখেছে, ‘ভোট হবে সাত দফা/ বিজেপির দফারফা’। ‘১২ মাসে ১২ হাজার/ ঘরে আছে লক্ষী ভান্ডার/ বারবার দরকার/ মমতার সরকার’।
কাঁথির অলিগলিতে ঘুরলেই চোখে পড়ছে নানা মজাদার ছড়া। —নিজস্ব চিত্র।
সাধারণ ভোটারদের নিজেদের তরফে টানার জন্য দেওয়ালে ছড়া লেখা রাজনীতিতে বহু পুরোনো। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনেও দেওয়াল জুড়ে লেখা এই সব ছড়া নজর কাড়ছে ভোটারদের। খাস কাঁথি শহরে অধিকারীদের বাড়ি ‘শান্তি কুঞ্জ’ থেকে কয়েক পা দূরে রাজ্যের শাসকদলের দেওয়াল লিখনে উঠে এসেছে লক্ষ্মী ভান্ডার প্রসঙ্গ। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘সন্ধ্যা হলেই আলো জলে/ পাকা রাস্তায় মানুষ চলে/ টাইম কলে জল পড়ে/ লক্ষ্মী ভান্ডার ঘরে ঘরে/ ওয়ার্ডবাসী বলছে তাই/ তৃণমূলকে আবার চাই’। ২০২২ সালে কাঁথি পুরসভার ভোটে অধিকারীদের নিজের বুথে পিছিয়ে পদ্ম শিবির। সে জায়গায় রাজ্য সরকারের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে শাসকদলের প্রচার যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কাঁথির অলিগলিতে ঘুরলেই চোখে পড়ছে নানা মজাদার ছড়া। —নিজস্ব চিত্র।
শহর কাঁথি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কাঁথি-৩ ব্লকের ভাজাচাউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বুথে বিজেপির দেওয়াল লিখনে ঠাঁই পেয়েছে একাধিক দুর্নীতি এবং সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে রাজ্য পুলিশকেও কটাক্ষ করা হয়েছে বিজেপির দেওয়াল লিখনে। এই ধরনের ছড়া-প্রচার প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা তথা কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা রাজশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘ছড়া - কবিতা বাংলার সংস্কৃতি। সাধারণ মানুষ যাতে বাস্তব পরিস্থিতি কবিতার ছলে বুঝতে পারেন, সে জন্য এমন পরিকল্পনা।’’ নিজেদের দেওয়াল লিখনে ছড়া-রচনা প্রসঙ্গে কাঁথির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছড়া বাংলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের রীতি। ছড়া পড়তে সাধারণ মানুষ খুব পছন্দ করেন। তাই বাস্তব ঘটনা নিয়ে আমরাও দেওয়াল লিখেছি।’’
ভোট প্রচারের সময় বহু নেতা-নেত্রী যখন ‘কু-কথা’ বলে প্রতিপক্ষকে বিঁধছেন, তখন এরই ফাঁকতালে এই ধরনের ছড়া পড়ে আপাতত মজছেন ভোটাররা। (চলবে)