প্রতীকী চিত্র।
সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন) কার্যকর করা নিয়ে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে বসবারকারী সংখ্যালঘুদের অনেকে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে, যে সব মানুষজন ১৯৭১ সালের পরে এ দেশে এসেছেন। কারণ, সিএএ আইনে আবেদন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার কোনও ব্যবস্থা সংখ্যালঘুদের নেই।
ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে আছেন এঁরা। তবে এ দেশে বংশ পরম্পরায় যে সংখ্যালঘুরা বসবাস করছেন, তাঁদের মধ্যে এই চিন্তা নেই। এরই মধ্যে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, এ দেশে স্থায়ী বসবাকারী সংখ্যালঘুদের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। কারণ, সিএএ-এর আওতায় পড়ছেন না তাঁরা। কিন্তু যে সব মুসলিম ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দেশে এসেছেন, যাঁদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে, যাঁরা ভোট দেন— তাঁদের কী হবে? শান্তনুর প্রশ্ন, ‘‘মুসলিমদের বাংলাদেশে কী সমস্যা? তাঁরা কী কারণে এ দেশে এসেছেন? একটা কথা পরিস্কার, সিএএ আইনে মুসলিমদের জায়গা নেই। তাঁরা এ দেশে এসে কী করে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড করলেন। কেন করলেন, কী তাঁদের উদ্দেশ্য?’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে শান্তনু বলেন, ‘‘ওঁদের পূর্বপুরুষেরাই তো দেশভাগ করে করেছিলেন।’’
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর এই কথা সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। বনগাঁর বাসিন্দা, এক মুসলিম জানালেন, তিনি ২০০০ সালের আগে এ দেশে এসেছেন। ২০১৪ সালের আগে তাঁর ভোটার কার্ড, আধার কার্ড তৈরি হয়েছে। তিনি নিয়মিত ভোট দেন। সিএএ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, বুঝতে পারছি না। খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।" তাঁর কথায়, "সিএএ আইনে যে ৬টি ধর্মের মানুষের কথা বলা হয়েছে, সেখানে কেন মুসলিম ধর্মের মানুষ থাকবেন না? আমরা তো অখণ্ড ভারতবর্ষের বাসিন্দা। আমাদের কেন বহিরাগত তকমা দেওয়া হবে?"
এক মহিলা বছর পঁচিশ আগে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছিলেন। টিন-বাঁশ-বেড়ার বাড়ি। তাঁর এবং পরিবারের সদস্যদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে। তবে তিনিও আতঙ্কিত। বললেন, "সিএএ আইনটা কী, এখনও পরিস্কার করে বুঝতে পারিনি। তবে শুনচি, সেখানে আবেদন করতে পারব না। আমাদের কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।" এক সংখ্যালঘু যুবকের মা-বাবা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এ দেশে বসবাস করছেন। ওই যুবকের জন্মও এ দেশে। কিন্তু জন্মের পরে চার বছর বয়সে বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। বছর সাতেক আগে এ দেশে ফিরেছেন। এখন তাঁর এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। ভোটও দিচ্ছেন। ওই যুবকের কথায়, "আমি তো জন্মসূত্রেই ভারতীয় নাগরিক। আমাকে কি অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে দেওয়া হবে?" এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘সিএএ আইনটা যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁদের থেকেও বেশি দিন ধরে আমরা এ দেশে বসবাস করছি। দেখি কে আমাদের তাড়ায়!"
নাসির সর্দার সহ কিছু সংখ্যালঘু কিছু মানুষ অবশ্য আপাতত উদ্বেগের কিছু দেখছেন না। নাসির বলেন, "আমরা এ দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। আমদের পূর্বপুরুষেরা কেউ কখনও বাংলাদেশে বসবাস করেননি। সিএএ নিয়ে আমাদের কোনও চিন্তা নেই।"
এ বিষয়ে কী বলছে তৃণমূল?
দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, "সিএএ আইনে সংখ্যালঘুদের কী হবে, সেটা পরে ভাবা যাবে। আমরা মতুয়ারাই তো এই আইনে মারা পড়ে যাব।" মমতার দাবি, সিএএ আইনে ৬টি ধর্মের মধ্যে হিন্দু ধর্ম আছে। তবে হিন্দু তো কোনও ধর্ম নয়। রামায়ণ-মহাভারততে হিন্দু ধর্মের কথা উল্লেখ নেই। যে ধর্ম আছে, তা সনাতন ধর্ম। সেটা আগেও ছিল, এখনও আছে। মমতার কথায়, ‘‘আমরা সনাতন ধর্মের মানুষ। সে ক্ষেত্রে কারা হিন্দু কী ভাবে বিচার করা হবে?"