কিরণময় নন্দ। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির পরে এ বার সমাজবাদী পার্টি আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করল। তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টির মতোই সমাজবাদী পার্টির অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে দর কষাকষিতে আকাশ ছোঁয়া ও অবাস্তব সংখ্যক আসন দাবি করছে কংগ্রেস। সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ স্তরের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সহ-সভাপতি কিরণময় নন্দ। তাঁর বক্তব্য, “পুরনো শরিক এনসিপি বা ডিএমকে-র মতো দলগুলিকে বাদ দিলে অন্য সব রাজ্যে জোট না হওয়ার পিছনে দায়ী কংগ্রেস। এই ইন্ডিয়া জোট ক্রমশ সোনার পাথরবাটি হয়ে উঠেছে। বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়া ছাড়া এর আর কোনও উপযোগিতা নেই।”
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলির মধ্যে নয়। কংগ্রেসের অন্দরমহলেও। বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলার জন্য মুকুল ওয়াসনিক, সলমন খুরশিদ, মোহন প্রকাশকে নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছিল। তাতে কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত ও ভূপেশ বঘেলকে রাখা হয়েছিল। তখন যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, ওয়াসনিকের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুব কংগ্রেসের সময় থেকে বন্ধুত্ব রয়েছে। মোহন প্রকাশের সঙ্গে নীতীশ কুমারের পুরনো সম্পর্ক। উত্তরপ্রদেশের খুরশিদের সঙ্গেও অখিলেশ যাদবের বহু
দিনের ঘনিষ্ঠতা।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো যে সব রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্যান্য দলের আগে থেকেই আসন সমঝোতা ছিল, তার বাইরে কোনও রাজ্যেই কোনও দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গে আসন ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। নীতীশ ইন্ডিয়া ছেড়েই বেরিয়ে গিয়েছেন। এখন অখিলেশ যাদবও ক্ষুব্ধ। পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হবে না বলে দুই দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার আম আদমি পার্টি গুজরাতের ভারুচ-সহ দু’টি আসন ও গোয়ার একটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের বক্তব্য, গত এক মাসে কংগ্রেস দিল্লির আসন সমঝোতা নিয়ে কোনও কথাই বলেনি। দিল্লিতে সাতটির মধ্যে কংগ্রেসকে একটি আসন ছাড়া বাস্তবসম্মত নয়।
একই হতাশা সমাজবাদী পার্টির কিরণময় নন্দের। তাঁর বক্তব্য, “আসন সমঝোতার প্রশ্নে কংগ্রেসের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। কিন্তু মাটিতে তাদের কোনও পায়ের ছাপই নেই।” অখিলেশ যাদব আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসকে উত্তরপ্রদেশে ১১টি আসন ছাড়ছেন। কিরণময়ের বক্তব্য, “কংগ্রেস চাইছে ২০টা আসন। আমরা ১১টির বেশি দেব না জানিয়েছি। অনেক দিন হয়ে গেল কংগ্রেস কথাবার্তা চালাচ্ছে। এখন জোট হলেও তার কোনও মূল্য নেই। জমি রোয়ার সময় যত্ন না করা হলে তা থেকে পরে ফসল পাওয়া যায় না। কারণ জনতা চুপ করে বসে নেই। তারা নিজ নিজ এলাকায় মনস্থির করে নিয়েছে। কংগ্রেসের অহেতুক বিলম্বের জন্য বিজেপি সুবিধা পেয়ে গিয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “২০টি লোকসভা আসন কংগ্রেসকে ছাড়া মানে কার্যত শ’খানেক বিধানসভা আসন দিয়ে দেওয়া। ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের কথাটাও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। এর আগে কংগ্রেসকে ১০৫টি বিধানসভা আসন ছাড়ার পরিণতিটা আমরা দেখেছি। কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ৫টি আসনে।” এসপি শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, ইন্ডিয়া জোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা বের করাটা বিরোধী ঐক্যে পেরেক পোঁতার শামিল। এতে বিরোধীদের অগ্রাহ্য করে কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধীর মুখকেই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকট ভাবে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। তাতেই ইন্ডিয়া জোটের মানসিকতায় ভাঙন ধরেছে।
কংগ্রেস অবশ্য এখনও আশা করছে, এসপি-র সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। অমেঠী, রায়বরেলী-সহ ১৫-১৬টি আসন এসপি কংগ্রেসকে ছাড়বে। অখিলেশ অমেঠি বা রায়বরেলীতে যাত্রায় যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু আম আদমি পার্টির সঙ্গে আর দিল্লিতে আসন সমঝোতা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বারবার সমনের চাপে কেজরীওয়াল ইন্ডিয়া জোট-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গুজরাতের ভারুচে আম আদমি পার্টির প্রার্থী দেওয়া নিয়েও কংগ্রেস নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ। ভারুচ সনিয়া গান্ধীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সচিব, প্রয়াত অহমেদ পটেলের এলাকা। সেখানে তাঁর কন্যা মুমতাজ পটেলকে প্রার্থী করার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের। মুমতাজের বক্তব্য, “আমি ভারুচের কন্যা, ভোটদাতা। এখানকার পরিস্থিতি আমি বেশি জানি। ২০২২-এর বিধানসভা ভোটের হিসেবে ভারুচে কংগ্রেস আপ-এর থেকে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিল। তার আগে কংগ্রেসের চার জন বিধায়ক ছিল।”