রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
এক সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রয়াত চৌধরী চরণ সিংহ ও সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথনকে ‘ভারতরত্ন’ দিয়ে কৃষকদের ‘সদর্থক বার্তা’ দিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরী চরণ সিংহ ছিলেন কৃষক নেতা। আর স্বামীনাথনই ঠিক করেছিলেন, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) কী হওয়া উচিত।
এক সপ্তাহের মধ্যে সেই স্বামীনাথনের সুপারিশ মতো এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তার দাবিতে কৃষক আন্দোলন যখন দিল্লির সীমানায় আছড়ে পড়ছে, তখন রাহুল গান্ধী ঘোষণা করলেন, ‘ইন্ডিয়া’র সরকার ক্ষমতায় এলে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তা দেবে।
আজ কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ ঠেকাতে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ রাজধানীতে ঢোকার রাস্তায় পেরেক পুঁতে, কংক্রিট-লোহার ব্যারিকেড বসিয়ে, কাঁটাতার বিছিয়েছে। বিজেপি শাসিত হরিয়ানার পুলিশ পঞ্জাব-হরিয়ানার চাষিদের ‘দিল্লি চলো’ ঠেকাতে ড্রোন থেকে কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুড়েছে। এ নিয়ে বিজেপি শিবির যখন প্রশ্নের মুখে তখন রাহুল ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা থেকে এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। যাতে দেশের সব চাষির ফসলের সরকার ঘোষিত এমএসপি মেলে। রাহুলের বক্তব্য, ন্যায় যাত্রা থেকে কংগ্রেস পাঁচটি ন্যায় বা নিশ্চয়তা ঘোষণা করবে। এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তা হল এই পাঁচ ন্যায়ের প্রথম নিশ্চয়তা।
ন্যায় যাত্রার মধ্যে আজ ছত্তীসগঢ়ের অম্বিকাপুরে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়্গে জনসভা করেছেন। সেখান থেকেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাহুল বলেন, এতে কৃষকদের জীবনে তিনটি বদল আসবে। এক, ফসলের ঠিক দাম মেলায় কৃষকদের দেনার বোঝা থেকে মুক্তি মিলবে। দুই, কোনও কৃষককে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে না। তিন, চাষ-আবাদ লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে। দেশের ১৫ কোটি কৃষক সমৃদ্ধ হবেন।
বিজেপি নেতৃত্ব পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ ইউপিএ-সরকারের জমানায় কার্যকর হয়নি কেন? কৃষি মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ২০১৮-১৯ থেকে মোদী সরকার চাষের খরচের দেড় গুণ এমএসপি নির্ধারণ করেছে। ২০১৩-১৪-র তুলনায় ২০২৩-২৪-এ ধানের এমএসপি ৬৭ শতাংশ, গমের এমএসপি প্রায় ৬২ শতাংশ বেড়েছে। মোদী সরকারের যুক্তি, প্রায় ২১টি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে চাল, গম, ডাল, তৈলবীজের মতো গোটা পাঁচেক ফসল এমএসপি-তে কিনতে সরকারের প্রায় সওয়া ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তা দিতে গেলে ওই সব ফসল সরকারকে কিনতে হবে। তাতে খরচ ১০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে।
উল্টো দিকে কৃষক সংগঠনগুলির প্রশ্ন, ২০২১-এ দিল্লির সীমানায় টানা এক বছরের কৃষক আন্দোলনের পরে মোদী সরকারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তার দাবি খতিয়ে দেখা হবে। দু’বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও মোদী সরকার কিছু করেনি। কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘মোদী সরকার তাঁর শিল্পপতি বন্ধুদের পথে লাল কার্পেট বিছিয়ে দেয়। অন্য দিকে কৃষকদের রাস্তায় পেরেক, কাঁটাতার পুঁতে রাখে।’