গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কেন ভোটপ্রচার চলাকালীন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন? শুক্রবার এই প্রশ্নই তুললেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। ৪ জুন, মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফলঘোষণার দিন শেয়ার বাজার ধসে পড়া নিয়ে তিনি পরোক্ষে আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকেই। এই নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র তদন্তও দাবি করেছেন। জানিয়েছেন, শেয়ার বাজারের ভরাডুবির নেপথ্যে বড় হাত রয়েছে। ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্নীতি বলেও দাবি করেছেন রাহুল। যদিও বিজেপির দাবি, বিনিয়োগকারীদের ভুলপথে চালিত করতে চাইছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটের হার ভুলতে পারেনি তারা।
গত মঙ্গলবার, লোকসভা ভোটের ফলঘোষণার দিন মুখ থুবড়ে পড়ে শেয়ার বাজার। দিনের এক সময় সেনসেক্স ৫,০০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে যায়। এই নিয়ে শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে সরব হলেন রাহুল। তিনি জানান, এই প্রথম বার নির্বাচন চলাকালীন শেয়ার বাজার নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন এ রকম করলেন তাঁরা? প্রশ্ন রাহুলের। তাঁর কথায়, ‘‘মোদী, শাহ, সীতারামন কেন পরামর্শ দিলেন বিনিয়োগের? এটা কি তাঁদের কাজ?’’ এর পর রাহুল শাহের মন্তব্য তুলে ধরে ‘ক্রোনোলজি’ মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘১৩ মে শাহ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ৪ জুনের আগে শেয়ার কিনুন। ১৯ মে থেকে ২৮ মে মোদী বার বার বলে গিয়েছেন, স্টক মার্কেট রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছবে ৪ জুন। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এটা লক্ষণীয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।’’
রাহুলের আরও দাবি, বিজেপির দলীয় সমীক্ষা জানিয়ে দিয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনে ২২০টি আসন পাবে তারা। ৩ জুন শেয়ার বাজারের উত্থান হলেও ৪ জুন পতন হবে। তার পরেও কেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগ করতে বলেছিলেন? এই প্রশ্নই তুললেন রাহুল। জানালেন, এর ফলে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তিনি বলেন, ‘‘আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে, এক, ভারতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে এমন পাঁচ কোটি পরিবারকে কেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিনিয়োগের পরামর্শ দিলেন? দুই, কেন এই সংক্রান্ত দু’টি সাক্ষাৎকার একই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হল? সেই সংবাদমাধ্যম যে সংস্থার অধীনে, তাদের বিরুদ্ধেও শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত অভিযোগে তদন্ত করছে সেবি। তৃতীয়, বিজেপি, ভুয়ো বুথফেরত সমীক্ষা (এগজিট পোল) সংস্থা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিসের সংযোগ?’’ এর পরেই সাংবাদিকেরা প্রশ্ন তোলেন, এ সবের নেপথ্যে কি আদানি গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে? জবাবে রাহুল বলেন, ‘‘আদানি যুক্ত থাকতে পারেন, কিন্তু তার থেকেও বড় হাত রয়েছে।’’ এর পরেই তিনি এই নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যতম বৃহত্তম স্টক মার্কেট দুর্নীতি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত চাই। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যে সব সংস্থা বুথফেরত সমীক্ষা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চাই।’’
এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা পীযুষ গয়াল বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী এখনও লোকসভা ভোটের হারের শোক ভুলতে পারছেন না। সে কারণে বিনিয়োগকারীদের ভুলপথে চালিত করার ষড়যন্ত্র করছেন। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশগুলির তালিকায় ভারত এখন পঞ্চম স্থানে।’’