গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো ওয়েনাড় নাকি মা সনিয়া গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া আসন রায়বরেলী? কোন লোকসভা কেন্দ্রকে নিজের সংসদীয় ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেবেন রাহুল গান্ধী? কোন কেন্দ্রের ভোটারদেরই বা নিরাশ করবেন? লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর কংগ্রেস এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছে। জবাব দেননি স্বয়ং রাহুলও। তবে রাহুলের একনিষ্ঠ অনুগামী তথা রাহুলের পূর্বতন কেন্দ্র অমেঠী থেকে জয়ী কংগ্রেসের নতুন তারা কিশোরীলাল শর্মা একটি জবাব দিয়েছেন। যদিও জবাব না বলে তাকে আর্জি বলাই ভাল। কিশোরী বলেছেন, তিনি চান রাহুল তাঁর মায়ের আসন রায়বরেলীকেই রেখে দিন তাঁর সাংসদ ক্ষেত্র হিসাবে।
রায়বরেলীতে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন রাহুল। এই আসনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সনিয়া। তারও আগে রায়বরেলী থেকে কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তবে কংগ্রেসের এই পুরনো গড়ে রাহুল এ বছর পেয়েছেন মা সনিয়ার থেকেও বেশি ভোট। বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়েছেন প্রায় চার লক্ষ ভোটে।
অন্য দিকে, ওয়েনাড় রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছিল তাঁর সঙ্কটকালে। অমেঠীতে যখন নিজের জয় নিয়ে অনিশ্চিত রাহুল, তখন তিনি এসেছিলেন কেরলের এই লোকসভা কেন্দ্রে। পুরনো কেন্দ্র অমেঠী শূন্য হাতে ফেরালেও ওয়েনাড় রাহুলের দু’হাত ভরিয়ে দিয়েছিল ভোটে। ২০১৯ সালে এই ওয়েনাড় থেকেই জিতেই সংসদে গিয়েছিলেন রাহুল। ২০২৪ সালেও তার ব্যত্যয় হয়নি। ওয়েনাড়ে এ বছরও রেকর্ড ভোটে জিতেছেন রাহুল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো ওয়েনাড়কে কি ছেড়ে চলে যাবেন রাহুল?
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর রাহুলকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, তিনি এখনও বিষয়টি নিয়ে ভেবে উঠতে পারেননি। কারণ তাঁর এবং তাঁর দলের সামনে এখনও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সেই নিয়ে সিদ্ধান্তও নেওয়ার আছে। তবে খুব শীঘ্রই সবার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় কী তা ঠিক করবেন তিনি।
আবার রাহুলের ওয়েনাড় আসন ছাড়ার ব্যাপারে কেরলের কংগ্রেস নেতৃত্বের মতামত জানতে চাওয়া হলে তাঁরা এ বিষয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করতে চাননি। দলীয় সূত্রে খবর, কেরলের কংগ্রেস নেতাদের একাংশ বলতে শুরু করেছে, যদি দলের চাপের কারণে এবং কংগ্রেসের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাহুলকে রায়বরেলী আসনটি রাখতেই হয়, তবে কংগ্রেসের উচিত রাহুলের পরিবর্ত প্রার্থী হিসাবে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে ওয়েনাড়ে আনা। এই সব জল্পনার মধ্যেই রাহুলের আসন নিয়ে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সদ্য কংগ্রেসের হয়ে তাদের পুরনো গড় অমেঠীর উদ্ধারকর্তা কিশোরীলাল।
যে স্মৃতি ইরানি রাহুলের পুরনো কেন্দ্র অমেঠীতে তাঁকেই হারিয়েছিলেন গত লোকসভায়, সেই স্মৃতিকে রাহুল এবং কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কিশোরীলাল হারিয়েছেন এক লক্ষ ৬৭ হাজার ১৯৬ ভোটে। অমেঠীর লোকসভা ক্ষেত্রে কংগ্রেসের এজেন্ট হয়ে তৃণমূল স্তরে কাজ করা সেই কিশোরীর বক্তব্য, ‘‘উনি কী করবেন, সেটা তো ওঁর ব্যাপার। কিন্তু আমি চাইব উনি রায়বরেলীটাই রাখুন।’’ এখন দেখার রাহুল তাঁর একনিষ্ঠ এবং ভোটারদের মন বোঝা কিশোরীর পরামর্শ বা আর্জি মানেন কি না।