চোদ্দো বছরেও হয়নি সাবওয়ে, ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের
Lok Sabha Election 2024

তিন স্টেশনে ৩৪০ কোটি, শ্রীরামপুর সেই ‘দুয়োরানি’

হুগলির মহকুমা শহর শ্রীরামপুরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। যাতায়াতের প্রধান ভরসা ট্রেন। নানা কাজে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ১০:১১
Share:

এ ভাবেই চলে যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

ব্যান্ডেল ৩০৭ কোটি। ডানকুনি ১৫ কোটি ৬ লক্ষ। চন্দননগর ১৮ কোটি ৩৪ লক্ষ। সব মিলিয়ে ৩৪০ কোটি। এই অঙ্কের বরাদ্দে লোকসভা ভোটের মুখে ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে হুগলির এই তিন স্টেশনের আধুনিক সজ্জার কাজের শিলান্যাস সোমবার ভার্চুয়ালি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাহবা কুড়িয়েছেন।

Advertisement

এই জেলারই শ্রীরামপুর স্টেশনে প্রস্তাবিত সাবওয়ে শিলান্যাসের ১৪ বছর পেরিয়েও বাস্তবের মুখ দেখেনি। এই না-হওয়া প্রকল্প নিয়ে রাজনীতির কচকচানি আছে। আছে মানুষের দুর্ভোগ। মানুষের চাহিদা কবে মিটবে, নেই সেই উত্তর।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘ঘোষিত প্রকল্পের জন্য তহবিল বরাদ্দ থাকে। ধাপে ধাপে কাজ হয়। এই সব কাজ হচ্ছে, হবেও।’’ শ্রীরামপুরে শিলান্যাসের পরে ১৪ বছর পার। কবে হবে?

Advertisement

এ বার তিনি বলেন, কী কারণে আটকে আছে, দেখতে হবে।

হুগলির মহকুমা শহর শ্রীরামপুরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। যাতায়াতের প্রধান ভরসা ট্রেন। নানা কাজে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত। টিকিট কাউন্টারের মুখে পাশাপাশি তিনটি সাবওয়ে। দু’টি দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামা, মাঝেরটি দিয়ে সাইকেল-মোটরবাইক, রিক্‌শা, টোটো চলে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হলেই সাবওয়ে পুকুর! মাঝেরটিতে শীত-বসন্তেও জল-কাদা। পশ্চিমে রেললাইন ঘেঁষে মাছের আড়ত। অন্য প্রান্তে হকারের সারি। পথচলতি মানুষ, গাড়িঘোড়া, যাত্রীদের ভিড়ে ঘিঞ্জি। সকাল-সন্ধ্যার অফিস টাইমে গুঁতোগুঁতি, ধাক্কাধাক্কির পরিস্থিতি হয়। দুর্বিষহ অবস্থা নিত্যযাত্রী এবং আশপাশের মানুষের রোজনামচা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ সরকারে রেলমন্ত্রী থাকার সময় শ্রীরামপুর ‘মডেল স্টেশন’ তকমা পায়। রেলের ‘সৌজন্যে’ সেই তকমা হাসিঠাট্টার সামিল!

মমতা রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে, ২০১০ সালে এখানে নতুন একটি সাবওয়ের ছাড়পত্র মেলে। সেই বছরের ২৪ এপ্রিল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন এলাকার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কাজ শুরু হয়েই থেমে যায়। এক পার থেকে অন্য পারে যাতায়াতে কষ্ট বেড়েছে। দ্বিতীয় একটি টিকিট কাউন্টারের দাবি পূরণ হয়নি। মাস পনেরো আগে সবেধন নীলমণি সাবওয়ের টিনের আচ্ছাদনের একাংশ খসে পড়েছিল।

মাহেশের রথযাত্রা জগৎবিখ্যাত। অথচ সৌন্দর্য্যায়ন প্রকল্পে ঘোষণা করা হয়েছিল, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে এই স্টেশন সাজানো হবে। পরে জানানো হয়, টিকিট কাউন্টার ‘মাহেশের রথ’, স্টেশন চত্বর পুরীর মন্দিরের আদলে করা হবে। কিন্তু ঘোষণাই সার।

প্রস্তাবিত সাবওয়ে না-হওয়ায় স্টেশনের উত্তর দিকে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামা চলে রেললাইন পেরিয়েই। রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রেলের ঘুম ভাঙেনি। বিভিন্ন স্টেশনে ঘটা করে নানা কাজের শিলান্যাস হলেও অনুমোদন হয়ে পড়ে থাকা প্রকল্পের দিকে কেন নজর নেই, সে প্রশ্ন উঠছে।

এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়েননি কল্যাণ। তাঁর বক্তব্য, মমতার ঘোষিত নানা প্রকল্প মোদী সরকারে আসার পরে পরিত্যক্ত করে দিয়েছেন। একে তিনি মোদীর ‘রাজনৈতিক বৈষম্য’ বলে উল্লেখ করেন। সাংসদের মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া রেলের তরফে দেওয়া হয়নি। তবে বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরে ওই কাজ অবশ্যই জরুরি। ব্যান্ডেলে ৩০৭ কোটি টাকায় আন্তর্জাতিক মানের স্টেশন হচ্ছে। একটা স্টেশনে এত টাকা দেওয়া যায়, কল্যাণবাবুরা স্বপ্নেও ভেবেছিলেন? ওই কাজ যখন হচ্ছে, শ্রীরামপুরও হবে।’’

সামনে আরও এক লোকসভা ভোট। আজ, শুক্রবার আরামবাগে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যত ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া প্রকল্প নিয়ে তিনি কিছু বলবেন? অপেক্ষায় শ্রীরামপুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement