জন বার্লা। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী তৃণমূল তো বটেই, খোদ বিজেপির একাংশও গত পাঁচ বছরে তাঁর কাজে খুশি ছিলেন না বলে গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর। সেই সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে আলিপুরদুয়ার আসনের আর টিকিট দেননি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বদলে উত্তরের এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন মাদারিহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গাকে। যে ঘটনার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে মনোজ-ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। কিন্তু প্রার্থী বদলের জেরে আখেরে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে দলের চাপ বাড়ল না তো? বিজেপির অন্দর থেকেই এ বার উঠতে শুরু করেছে সেই প্রশ্ন।
চা বলয় অধ্যুষিত আলিপুরদুয়ার জেলায় দীর্ঘ দিন থেকেই একটি কথা চালু রয়েছে যে, বাগান শ্রমিকদের ভোট যাঁদের দিকে যাবে, জেলার রাজনৈতিক ক্ষমতাও তাঁদের হাতেই যাবে। সেই আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র থেকে গত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয় পান বার্লা। বিজেপি নেতাদের একাংশের কথায়, বিটিডব্লুউইউ বা ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান হিসাবে সেই ২০১৬ সাল থেকেই নিজের লোকসভা কেন্দ্রের চা বলয়ে সংগঠন গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন তিনি। যাতে তিনি অনেকটা সফলও। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেও তার একটা প্রভাব পড়ে বলে মত বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের। ওই নেতাদের কারও কারও কথায়, বিটিডব্লিউইউয়ের নেতা হিসাবে এখনও চা বলয়ে প্রভাব রয়ে গিয়েছে বার্লার।
ওই সংগঠনের এক নেতার সাফ কথা, “আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী বদলের পরে জন বার্লার সঙ্গে এখনও সে ভাবে কথা হয়নি। তবে শীঘ্রই হবে। এবং উনি যে ভাবে চাইবেন, আসন্ন ভোটে আমরা সে ভাবেই কাজ করব।” আর বিজেপির এক জেলা শীর্ষ নেতার কথায়, “বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে জন বার্লার সম্পর্কটা দলের সকলের জানা। আর আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের কোনও-কোনও অংশে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কিছু ভোটও রয়েছে। ফলে প্রার্থী বদল হলে, সেই ভোটটা এ বার কোন দিকে যায়, সেটাও চিন্তার।” তবে বিজেপির ওই জেলা শীর্ষ নেতা এটাও জানান, টিকিট না পাওয়া বার্লা আখেরে এ বারের নির্বাচনে কী অবস্থান নেন, সেটা দেখতে হবে।
যদিও শনিবার প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রবিবার পর্যন্ত একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি বার্লাকে। দলের প্রার্থী মনোজ টিগ্গা বলেন, “বিজেপি ক্যাডার বেসড পার্টি। তাই বিজেপির নিজের সংগঠনের উপরে দাঁড়িয়ে ভোট করায়। তা ছাড়া আমাদের প্রার্থী এক জনই, তিনি নরেন্দ্র মোদী।” একই সঙ্গে মনোজের সংযোজন, “জন বার্লার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি বিজেপি প্রার্থীকে জেতাতে ভোটে পরিশ্রম করবেন বলে জানিয়েছেন।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সদস্য প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “এ বারের লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই প্রার্থী বদল। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। কাজের ভিত্তিতে মানুষ ভোট দেবেন।”