পূর্ণিমার হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দত্তপুলিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিধায়কের পর এ বার জেলা পরিষদের সদস্য। লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই ফের ভাঙন বিজেপিতে। রবিবার দত্তপুলিয়ায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপির জেলা পরিষদের সদস্য তথা বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সহ-সভাপতি পূর্ণিমা দত্ত।
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নদিয়ার দক্ষিণে বিজেপিকে ধাক্কা দিয়েছিল তৃণমূল। রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী বিজেপি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। রবিবার ধানতলা থানার দত্তপুলিয়ায় ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি ফর গার্লস স্কুলের মাঠে আয়োজিত তৃণমূলের নির্বাচনী জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপির জেলা পরিষদের সদস্য পূর্ণিমা দত্ত। রানাঘাট ১ ব্লকের কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা পূর্ণিমা বিজেপির পুরনো কর্মী। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে তিনি মহিলা মোর্চার জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তার পরে বিভিন্ন সময় দলের জেলার সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি দায়িত্ব সামলেছেন। মাঝে বছর দুয়েক তাঁকে জেলা কমিটির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি তাঁকে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি পদে আনা হয়। এ বারের নির্বাচনে রানাঘাট ১ ব্লক থেকে জেলা পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন পূর্ণিমা। দীর্ঘ দিন দলের জেলা স্তরের বিভিন্ন পদে থাকা পাশাপাশি এ বারের জেলা পরিষদের সদস্য পূর্ণিমার দলত্যাগে গেরুয়া শিবির ধাক্কা খেল বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।
দলের অন্দরে এক সময় জগন্নাথ সরকারের শিবিরের বলে পরিচিত ছিলেন পূর্ণিমা। আর এ বারে নির্বাচনে সেই জগন্নাথকে প্রার্থী করেছে দল। তা হলে পূর্ণিমার দলত্যাগ কেন? জগন্নাথকে দুষে পূর্ণিমা বলেন, ‘‘জগন্নাথ সরকারের জন্য দল ছাড়লাম। প্রতিবন্ধীদের সরঞ্জাম বিলি থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া— বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অনেক দুর্নীতি দেখেছি। আর সহ্য করতে পারছিলাম না। এ বার মুখ খুলব। তাঁর সব দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আনব।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যবাসীদের প্রতি বঞ্চনা করছে। তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বিশ্বকর্মা প্রকল্প যে আসলে একটা বড় প্রতারণা তা-ও বুঝতে পারছি। যে কারণে দল ছাড়লাম।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে পূর্ণিমার বিরুদ্ধে দলের একাংশ অভিযোগ তুলেছিল। অভিযোগ ছিল, কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্যকে তিনি তৃণমূলের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পূর্ণিমার দাবি, ‘‘আমি সে সময় বলেছিলাম আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। প্রয়োজনে যে রেস্তরাঁয় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে তো সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তার ফুটেজ পরীক্ষা করা হোক। আমি সেখানে ছিলাম না।’’
নদিয়া দক্ষিণে এর আগে এক বিধায়ক দল ছেড়েছেন। তাঁকে তৃণমূল প্রার্থীও করেছে। তার পর দলের জেলা স্তরের নেত্রীর দলত্যাগ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কি ব্যাকফুটে ফেলল? বিজেপির স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, পূর্ণিমার দলত্যাগ দলে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। যদিও রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘যে দলের মন্ত্রীরা দুর্নীতির কারণে গ্রেফতার হয়, সেই দলে গিয়ে উনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছেন। এটা মানুষ বিশ্বাস করবে না। উনি আসলে টাকার লোভে দল ছেড়েছেন। নির্বাচনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।’’