Lok Sabha Election 2024

দিলীপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মোদী, সঙ্গে শুভেন্দুর নামও, মেদিনীপুরের সভায় সমন্বয়ের বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

পঞ্চম দফা ভোটের আগের দিন রবিবার বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তিনটি জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শেষ সভায় মেদিনীপুরে দিলীপ-শুভেন্দুর প্রশংসা করেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৯:১০
Share:

(বাঁ দিক থেকে) দিলীপ ঘোষ, নরেন্দ্র মোদী, শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

দিলীপ ঘোষকে ‘বড় নেতা’ বলে বর্ধমান-দুর্গাপুরে উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই আসন থেকেই এ বার ভোটে লড়ছেন দিলীপ। রবিবার দিলীপের ছেড়ে যাওয়া আসন মেদিনীপুরে এসে আরও বেশি করে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির প্রশংসা করলেন মোদী। সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইয়ের কথাও বললেন। কিন্তু কেন? বিজেপি নেতারাই বলছেন, এই জেতা আসনে দিলীপকে প্রার্থী না করায় বিজেপির স্থানীয় ‘আদি’ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভ দূর করে দিলীপ ও শুভেন্দুর যৌথ প্রচেষ্টাতেই যাতে মেদিনীপুরের লড়াই হয় সেই লক্ষ্যে সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে গেলেন মোদী।

Advertisement

খড়্গপুর জনসভায় মোদী দিলীপের প্রশংসা করতে গিয়ে ঘোষের নেতৃত্বেই যে বাংলায় সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে, সে কথাও বলেন। সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুভেন্দুর লড়াইয়ের কথাও উল্লেখ করেন মোদী। এক কথায় মেদিনীপুরের যুদ্ধে পদ্মশিবিরে দুই সেনাপাতিকে সমান গুরুত্বের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরেই খড়্গপুর সদর আসনে দাঁড়িয়েই পদ্ম ফুটিয়েছিলেন দিলীপ। খড়্গপুর সদর আসনের সমার্থক হয়ে যাওয়া কংগ্রেস নেতা জ্ঞান সিংহ সোহন পালকে হারিয়ে পথ চলা শুরু করেন তিনি। তারপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা নিজের জয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলকে ১৮টি আসন জেতানও তিনি। এবং তাঁরই নেতৃত্বে ৭৭ আসন জিতে রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দল হিসাবে স্বীকৃতি পায় বিজেপি। তাঁর এই কৃতিত্বকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ভোটে শুভেন্দু এবং দিলীপ অনেকবার নিজেদের অখণ্ড মেদিনীপুরের ‘দুই ভূমিপুত্র’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। দিলীপ অন্য আসনে প্রার্থী হওয়ায় তাঁর অনুগামীরা যাতে মেদিনীপুর কেন্দ্রে নিরুৎসাহ হয়ে বসে না থাকেন, সেই কারণেই মোদী এমন কুশলী বক্তৃতা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শুভেন্দু বরাবরই ফ্যাক্টর। তৃণমূলও জঙ্গলমহলে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছিল তাঁর নেতৃত্বেই।

সে কথা মনে রেখেই মোদী বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে আমাদের শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষের কর্মভুমি। আমি দিলীপকে রাজনীতির অনেক আগে থেকে চিনি। পরিশ্রম করা তাঁর স্বভাব। উনি শান্তিতে বসতে পারেন না। তিনি পার্টি সভাপতি হিসাবে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছিলেন।’’ প্রসঙ্গত, রাজনীতিতে আসার আগে দিলীপ ছিলেন আরএসএসের প্রচারক। একই সংগঠনের প্রচারক ছিলেন মোদীও। প্রচারকদের সর্বভারতীয় বৈঠকে তাঁদের যে দেখা হয়েছে তা বিজেপির প্রবীণরা অনেকেই জানেন। রবিবার সেই কথাই উল্লেখ করে গেলেন মোদী। সভা শেষে দিলীপের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলতে দেখা যায় মোদীকে। জানা গিয়েছে, দিলীপের আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে যাওয়া মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং ঘাটাল লোকসভা আসনে তাঁকে বেশি করে সময় দিতে বলেন মোদী।

Advertisement

প্রসঙ্গত, দিলীপ আগে ছিলেন ঝাড়গ্রামের ভোটার। ভোট ঘোষণার কয়েক মাস আগেই তিনি ‘নিজের আসন’ মেদিনীপুরের ভোটার হন। যদিও দলের সিদ্ধান্তে মেদিনীপুর আর তাঁর ‘নিজের আসন’ থাকেনি। নতুন কেন্দ্র থেকে লড়তে হয়েছে তাঁকে। প্রথম দিকে এ নিয়ে দিলীপের মনে ক্ষোভ থাকলেও পরে তা মেনে নেন। রবিবার মোদীর প্রশংসা শোনার পরে কি আরও বেশি করে মেদিনীপুরে সময় দেবেন তিনি? আনন্দবাজার অনলাইনকে দিলীপ বলেন, ‘‘এখন তো আমি মেদিনীপুরেই রয়েছি। আমার ভোট শেষ হওয়ার পর থেকেই এই এলাকায় প্রচারে রয়েছি। সেটা চালিয়ে যাব। এর পরে কলকাতার দিকে ভোটেও সময় দেব।’’

রবিবার দিলীপ মঞ্চে থাকলেও শুভেন্দু ছিলেন না। মোদী বলেন, ‘‘শুভেন্দু তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করে যাচ্ছেন। তাই আমি বলব, মেদিনীপুরে বিজেপির কার্যকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। মেদিনীপুর থেকে অগ্নিমিত্রা পাল ও ঘাটালে হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়কে জেতাতেই হবে।’’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সভা করলেও, দিলীপকে তাঁর পাশে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে তাঁর সমর্থনে মোদীর প্রচারে ছিলেন। সে দিন প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসতে দেখা গিয়েছিল দিলীপকে। তবে রবিবার খড়্গপুরের সভায় দিলীপ আগাগোড়াই উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। রবিবার তিনটি সভা করে মোদী ভূবনেশ্বরে চলে যান। সোমবার রাজ্যে আরও দু’টি সভা রয়েছে তাঁর। ভূবনেশ্বরের কর্মসূচি মিটিয়ে তিনি বাংলায় আসবেন। ঠিক ছিল, দুই সভার পরে হাতে সময় থাকলে তিনি সল্টলেকে বিজেপির নতুন রাজ্য দফতরে যাবেন। যদিও শেষ মুহূর্তে সে কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়। সদ্যই বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর প্রয়াণ হয়েছে। সোমবার বাংলার রাজ্য দফতরের কর্মসূচি বাতিল করে মোদী সোজা পটনায় সুশীলের বাড়িতে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement