দীপক অধিকারী (দেব), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হিরণ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দেবের সমর্থনে ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত কেশপুরে জনসভা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী তথা ঘাটালের বিজেপির প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের নামও মুখে আনলেন না। অভিষেক বললেন, ‘‘ওটার নামও নেব না। যত সব দু’নম্বরি লোক। আমরা যে ক’টাকে দল থেকে বার করে দিই, বিজেপি তাদের মাথার উপর তুলে রাখে। কোথায় দীপক অধিকারী (দেব) আর কোথায় ওই দু’নম্বরি প্রার্থী।’’ ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে বিজেপির প্রার্থীর তফাত বোঝাতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘দীপক অধিকারী বছরে তিনটে করে সিনেমা করে, ওর রাজনীতি করার দরকার পড়ে না। আর যে বিজেপির প্রার্থী হয়েছে, চার বছরে একটাও সিনেমা পায়নি। কাজ নেই তো! তাই পয়সা কামাতে এসেছে।’’
এর আগেও দেবের সমর্থনে রোড-শোয়ে এসে হিরণকে আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। তিনি বলেছিলেন, হিরণ তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে এসে দেখাও করেন। অভিষেক জানিয়েছিলেন, সেই সাক্ষাতের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে তাঁর কাছে। রবিবারও হিরণকে নাম না করে আক্রমণ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এই দু’নম্বরি ভুঁইফোঁড় ফেরেব্বাজ চিটিংবাজগুলোকে প্যাকেট করে গ্যারেজ করতে হবে।’’ একই সঙ্গে কেশপুর বিধানসভা ক্ষেত্রের বাসিন্দাদের জন্য ঘোষণা করেছে বিশেষ ‘উপহার’ও। অভিষেক বলেন, ‘‘এক লক্ষের ব্যবধানে দেবকে জেতালে ছ’মাসের মধ্যে বাড়ি তো হবেই, তার সঙ্গে কেশপুর বিধানসভায় ৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা আমি এক মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে বলে করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।’’
উল্লেখ্য গতবার লোকসভা ভোটে দেবের প্রাপ্ত ভোটের একটি বড় অংশ এসেছিল এই কেশপুর বিধানসভা থেকেই। সেই কেশপুরের হাতেই ২০২৪-এও দেবকে জেতানোর দায়িত্ব সঁপলেন অভিষেক।
কেশপুর থেকে গত লোকসভায় বিপুল ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। সেই কেশপুরে অভিষেকের ঘোষণা, ‘‘এক লক্ষের ব্যবধানে দেবকে জেতালে ছ’মাসের মধ্যে বাড়ি তো হবেই, তার সঙ্গে কেশপুর বিধানসভায় ৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা আমি এক মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে বলে করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।’’ নাম না করে বিজেপির প্রার্থী হিরণ প্রসঙ্গে অভিষেক বললেন, ‘‘কিন্তু এই দু’নম্বরি ভুঁইফোঁড় ফেরেব্বাজ চিটিংবাজগুলোকে প্যাকেট করে গ্যারেজ করতে হবে। আর এদের ৪ তারিখের পর দেখবেন কী হাল হয়, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক নম্বরে বোতাম টিপে দু’নম্বরিগুলোর দু’গালে দুটো করে থাপ্পড় মেরে বের করে দেবেন।’’
অভিষেক বললেন, এখন আপনাদের ভোটের দরকার তাই টাকা দিতে আসছে। আমি বলছি, টাকা দিতে এলে নিয়ে নেবেন। ৫০০ দিতে এলে ১০০০ টাকা চাইবেন। ১০০০ টাকা দিলে ২০০০ চাইবেন। ২০০০ দিলে ৫০০০ টাকা চাইবেন। স্যাকরার ঠুকঠাক কামারের এক ঘা। আপনি এক কোপে ২৫ তারিখ মারবেন। পদ্মফুলের থেকে টাকা নিয়ে জোড়া ফুলে ভোট দেবেন। এক নম্বর বোতাম টিপে দীপক অধিকারীকে এক লক্ষের বেশি ভোটে শুধু কেশপুর থেকে জেতাতে হবে।
দেবকে পাশে নিয়ে অভিষেক বললেন, ‘‘চার দফা ভোট হয়ে গিয়েছে। বিজেপির মাথা, ঘাড়, মেরুদণ্ড, কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সোমবার হাওড়া-হুগলিতে ভোটে, হাঁটু আর পা-টা ভাঙা হবে। আর আপনারা এদের হাত আর কনুইটা ভাঙবেন মেদিনীপুরের মানুষ। শেষ দফায় আমি আছি ডায়মন্ড হারবার। ওদের ঔদ্ধত্য, দম্ভ আর অহঙ্কার ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে বলো হরি, হরিবোল বহিরাগতদের...। আজ এখানে আমি খুঁটিপুজোটা করে দিয়ে গেলাম। ২৫ তারিখ আপনারা অষ্টমীর অঞ্জলিটা দেবেন দীপক অধিকারীকে ভোট দিয়ে। আর ৪ তারিখ বিসর্জন হবে দিল্লির বুকে।’’
ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে অভিষেক বললেন ‘‘ওটার নাম নেব না। যত সব দু’নম্বরি লোক। আমরা যে ক’টাকে দল থেকে বার করে দিই, বিজেপি তাদের মাথার উপর তুলে রাখে। কোথায় দীপক অধিকারী (দেব) আর কোথায় ওই দু’নম্বরি প্রার্থী! দীপক অধিকারী বছরে তিনটে করে সিনেমা করে, ওর রাজনীতি করার দরকার পড়ে না। আর যে বিজেপির প্রার্থী হয়েছে, চার বছরে একটাও সিনেমা পায়নি। কাজ নেই তো,পয়সা কামাতে এসেছে।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘বাবু সেজে আপ-ডাউন করছে বিজেপি। সোমবার বাংলায় এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী সভা করবেন। ২০২১ সালে ভোটে বিজেপি এখানে হারার পর কত বার এসেছেন? কত বার জিজ্ঞাসা করেছেন খেয়েছেন কি না? বাড়িতে সব ঠিক আছে কি না। সবাই ভাল আছেন কি না। কোনও প্রয়োজন আছে কি না। আপনাদের পাশে কে দাঁড়িয়েছিল? এই দেব। কোভিডের সময় যেখানে যেখানে এই ঘাটালের মানুষ আটকেছিলেন, তাঁদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করেছে দেব। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছনোর দায়িত্ব নিয়েছে দেব। আদর্শ সাংসদের কাজ করেছে দেব। এই ছেলেটাকে জেতাতে হবে।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘বাংলার মনীষীদের অবজ্ঞা করেছে বিজেপি। অমিত শাহের নেতৃত্বে কলকাতার রাজপথে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল। কখনও রামমোহন রায়কে ছোট করেছে, কখনও স্বামী বিবেকানন্দকে অজ্ঞ বামপন্থী প্রোডাক্ট বলেছে। বাংলা দেশকে পথ দেখিয়েছিল। আমরা স্বামীজির গেরুয়া ধর্মে বিশ্বাসী, যোগী আদিত্যনাথের গেরুয়ায় নয়।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘আমি খবর পাচ্ছি কেশপুরে আবার সিপিএমের হার্মাদগুলো বিজেপির জার্সি পরে সিপিএমের সময়ের কালো দিনগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। আমি বলছি সাহস ভাল, দুঃসাহস ভাল নয়। ৪ তারিখের পর আপনারা যে ভাষায় বোঝেন সেই ভাষায় এর জবাব দেব।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘বিজেপিরই মণ্ডল সভাপতি বলেছে, বিজেপির প্রতি বুথে মদের খরচ ৫০০০ টাকা। বাংলায় ৮০ হাজার বুথ। মানে সেই হিসাবে ৪০ কোটি টাকা। অথচ আপনাদের টাকা দেবে না। ’’
কেশপুরের মঞ্চে একটি অডিয়ো ক্লিপ শোনালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে শোনা যাচ্ছে এক মহিলা কণ্ঠস্বর বলছেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার আর বেশি দিন থাকবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।’’ অভিষেক জানালেন, এই কণ্ঠস্বর এক বিজেপি নেত্রীর। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি বিজেপি।
অভিষেক বললেন, ‘‘এরা সব মিথ্যাবাদীর দল। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল, সব দু’নম্বরি। সন্দেশখালিতে কী করেছে দেখেননি! কী ভাবে মহিলাদের অপমান করেছে! বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছে, ২০০০ টাকার বিনিময়ে মহিলাদের দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ করিয়েছি, যাতে তৃণমূলকে জব্দ করা যায়।’’
কেশপুরে অভিষেক বললেন, ‘‘দেব আপনাদের হয়ে বহু বার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রাপ্য প্রকল্পের টাকার জন্য বলেছে। কিন্তু শোনা হয়নি। মোদী সমস্ত প্রকল্পের অর্থ আটকে রেখেছে। আপনাদের যদি কেউ বলে মোদী টাকা দিয়েছে, তবে তাকে আগে গাছে বেঁধে আমাকে ফোন করবেন। গায়ে হাত দেবেন না। শুধু বেঁধে রেখে আমাদের প্রতিনিধিদের জানাবেন। এখানে ক্যামেরা আছে, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আছে। আপনাদের হাতে মোবাইল ফোন আছে। আমি আপনাদের বলছি। ২০২১ সালে বিজেপি এখানে হারার পর ২০১৭-১৮ সালে আবাসের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল, তাতে যদি ১০ পয়সা দিয়েছে বলে হিসাব দিতে পারে সরকার, তবে আমি আর সভা-সমিতিতে গিয়ে আপনাদের কাছে ভোট চাইতে যাব না। রাজনীতিতে পা রাখব না। এত বড় কথা বলে দিয়ে যাচ্ছি। ’’
অভিষেক বললেন, ‘‘ঘাটালে এক মাস আগেই এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের। ছ’মাসের মধ্যে ওই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’