ডিভিসির রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই জমিতেই হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক জনসভা থেকে রঘুনাথপুরে শ্যাম স্টিলের সুসংহত ইস্পাত প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন দিনেকের মধ্যে সেই রঘুনাথপুরে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা নির্বাচনের আবহেই কি রঘুনাথপুরে শিল্পের এমন জোয়ার, চলছে চর্চা। পাশাপাশি, বিনিয়োগের অঙ্ক ও সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের তুলনা টেনে শাসক-বিরোধীতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
শ্যাম স্টিলের প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। শুরু হয়েছে উৎপাদনও। সংস্থা সূত্রের খবর, ধাপে ধাপে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে সেখানে। তৃণমূলের দাবি, আরও একটি ইস্পাত সংস্থা ওই প্রকল্পের অদূরে জমি পেয়েছে। তারাও কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। ওই সংস্থাকে পুরুলিয়ার সভা থেকে জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিকে, ডিভিসির আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এই বিনিয়োগে ওই এলাকার আর্থিক বিকাশ ঘটবে।
বিজেপির দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে দেড় হাজার কোটির প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শিলান্যাস করেছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটির প্রকল্পের। তুলনা টেনে রঘুনাথপুরের বিজেপি বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি বলেন, “তফাতটা স্পষ্ট। যেখানে বেসরকারি সংস্থার বিনিয়োগকে নিজেদের সাফল্য বলে প্রচার করছে তৃণমূল, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শিলান্যাস করছেন সরকারি প্রকল্পের। সেখানে বিনিয়োগ করছে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই।”
পাশাপাশি, শুধু ডিভিসি নয়। এক ধাপ এগিয়ে রেলের উন্নয়নে শুধু পুরুলিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার সাড়ে তিনশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বলে দাবি পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতোর। তাঁর অভিযোগ, পুরুলিয়া শহরের গোশালা মোড়ের উড়ালপুল তৈরিতে অনুমতি দিতেই রাজ্য সরকার চার বছর দেরি করছে।
তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তাদের আমলে রঘুনাথপুরে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বুঝেই ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, গত কয়েক বছরে রঘুনাথপুর এলাকায় কম-বেশি দশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে নানা শিল্প সংস্থা। ‘জঙ্গলসুন্দরী’ কর্মনগরীতে বিনিয়োগে আগ্রহী আরও কিছু শিল্প সংস্থা সেখানে রাজ্যের কাছে জমি চেয়ে আবেদন করছে।
সৌমেন বলেন, “তফাতটা সত্যিই স্পষ্ট। রাজ্য সরকারের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তির জন্যই পরপর বিনিয়োগ আসছে রঘুনাথপুরে। কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। অথচ সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরি পাবে এক হাজারের কম লোক। শুধু শিল্প স্থাপন নয়। রাজ্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিনিয়োগের সঙ্গে এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি করা।”