নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আবারও নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সরব হল তৃণমূল। সরব হওয়ার পাশাপাশি আরও এক বার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে লিখিত অভিযোগ জানান তারা। কমিশনে দেওয়া এই প্রতিবাদপত্রে কংগ্রেসের প্রতিও সমর্থনের ইঙ্গিত দিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ ও সাকেত গোখলে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের স্বাক্ষর করা তিন পাতার প্রতিবাদপত্র তুলে দেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের হাতে।
নির্বাচন কমিশন দফতরের বাইরে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের দুই সাংসদ। বাংলার শাসকদলের এই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ করা হলেও কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের প্রবল লড়াই থাকলে জাতীয় স্তরের বাংলার শাসকদল যে এআইসিসি নেতৃত্বের পাশেই থাকবে তা-ও বোঝানো হয়েছে এই স্মারকলিপিতে।
তৃণমূলের এই স্মারকলিপিতে ১০ মে তেলঙ্গানা জনসভার প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জনসভায় মোদী কংগ্রেসকে ‘হিন্দু বিরোধী’ রাজনৈতিক দল বলে যে ভাবে আক্রমণ করেছেন, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যাঁরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতা করবেন এবং ‘ভোট জিহাদে’র কথা বলবেন তাঁদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর এই মন্তব্য নির্বাচনী বিধিভঙ্গের শামিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগ কাজে লাগিয়ে ভোট চাওয়ার যে অভিযোগ তৃণমূল করেছিল, সে কথাও কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের কথোপকথনের যে অডিয়ো প্রকাশ পেয়েছিল, তা-ও নির্বাচনী বিধিভঙ্গের শামিল বলেও কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তা-ও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছে তৃণমূল।
এ ছাড়াও গত ৪ মে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নির্বাচনীবিধি ভঙ্গ করে ‘অন্যায্য প্রভাব’ খাটানোর চেষ্টা করেছেন, বলেও অভিযোগ করা হয়েছে কমিশনে। এ কথা বাংলার শাসকদল স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযোগ করলেও কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়ার পর তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা বলেন, ‘‘বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার বার নির্বাচনীবিধি লঙ্ঘন করছেন। তাঁরা বার বার ধর্ম নিয়ে বক্তৃতা করছেন, ধর্ম নিয়ে কথা বলছেন। ধর্ম নিয়ে দেশের মানুষকে বিভাজিত করার চেষ্টা করছেন। সঙ্গে তাঁরা এমন শব্দের ব্যবহার করছেন যা নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নানা আর্থিক প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করছেন। যা নির্বাচনের সময় করা যায় না। এই নিয়ে আমরা তিনটি চিঠি নির্বাচন কমিশনকে দিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর পাইনি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি, যে ভাবে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। আমরা ভয় পাচ্ছি যে ‘মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট’ না আসলে ‘মোদী কোড অফ কন্ডাক্ট’ হয়ে দাঁড়ায়।’’