হেলিকপ্টার থেকে নেমে প্রায় দু'কিলোমিটার রাস্তা এ ভাবেই গাড়িতে জনসংযোগ করতে করতে সভাস্থলে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অশোকনগরে ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।
মতুয়া সমাজের মানুষের নাগরিকত্ব পাওয়া ‘পৃথিবীর কোনও শক্তি’ আটকাতে পারবে না বলে জানিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বারাসতের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের সমর্থনে জনসভা করতে এসেছিলেন অশোকনগরের হরিপুরে। হেলিকপ্টারে অশোকনগর স্টেডিয়ামে নেমে সড়ক পথে সভাস্থলে পৌঁছন মোদী। উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য, দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র, বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষ।
হাবড়া-অশোকনগর এলাকায় প্রচুর মতুয়া এবং উদ্বাস্তু মানুষের বসবাস। মোদী বক্তৃতায় মতুয়াদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘মতুয়া সাথীদের অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পৃথিবীর কোনও শক্তি আটকাতে পারবে না।’’ সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন) নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করে মোদী বলেন, ‘‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে সিএএ নিয়ে তৃণমূল মিথ্যা ছড়াচ্ছে। সিএএ রোখার চেষ্টা করেছে। মোদী ভয় পায়নি। মোদী নিচু হয়নি। মোদী বলেছে, সঠিক সময়ে আমি সিএএ নিয়ে আসব। মোদী সিএএ নিয়ে এসেছে। প্রথমে বলত (তৃণমূল), সিএএ লাগু হবে না। এখন লাগু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক শরণার্থী নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছেন।’’
সিএএ কার্যকর করার কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে তৃণমূল মতুয়া উদ্বাস্তুদের সাবধান করে বলছে, কেউ আবেদন করবেন না। করলে বে-নাগরিক হয়ে যাবেন। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন। ডিটেনশন ক্যাম্পে জায়গা হবে। সেই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কারও কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি। বরং নাগরিকত্ব দিয়ে শরণার্থীদের, এ দেশের মা-বোনের সম্মান দেওয়া হচ্ছে।’’
সিএএ প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্য নিয়ে অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রধানমন্ত্রী নিঃশর্ত দিচ্ছেন না কেন? কেন ৩৪ পাতার শর্ত দেওয়া হয়েছে। মতুয়াদের আর বোকা বানানো যাবে না। ভোটে মতুয়ারা এর উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেবেন।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘মতুয়ারা তো নাগরিকত্ব পেতেই চান। তা হলে তাঁদের আজও কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হল না? আসলে নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি ভাঁওতা দিচ্ছে ভোটের আগে। মতুয়াদের বে-নাগরিক করার চক্রান্ত করছে।’’ সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর অশোকনগর লোকাল কমিটি পক্ষে অজয় বসাক বলেন, ‘‘রাজ্যের এক দল দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বারাসত কেন্দ্রের প্রার্থী, এক কুখ্যাত মাদক পাচারের আসামীর পক্ষে ওকালতি করলেন। এটা এই দলের পক্ষেই সম্ভব।’’ অজয়ের অভিযোগের তির বিজেপি প্রার্থী স্বপনের দিকে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘স্বপনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। আদালত বেকসুর খালাস দেয় বলেই উনি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।’’