—গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ভোটের মাঠে নামা হয়নি তাঁর। মনখারাপের মধ্যেই অন্য ময়দানে মাথা তোলার লক্ষ্য নিয়ে ফেললেন বারাসতের বাদ পড়া ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রবীর ঘোষ। লাল পতাকায় হলুদ সিংহ ছেড়ে এখন তিনি সবুজ-মেরুনে জমি শক্ত করতে চান। পয়লা বৈশাখ ময়দানে বারপুজো হয়। ওই দিন থেকেই নতুন উদ্যমে মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে রাখার কাজ শুরু করে দিতে চান তিনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন প্রার্থী আপাতত সমর্থক হিসেবে মোহনবাগানের ‘ফরওয়ার্ড’।
বৃহস্পতিবার প্রবীর বলেন, ‘‘গতকাল (বুধবার) বিকেলের পর থেকে মনটা ভাল নেই। কী যে হয়ে গেল! আমি ঠিক করে নিয়েছি, আর রাজনীতি করব না। এখন শুধু মোহনবাগান নিয়েই থাকব।’’ প্রবীর মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য। টিম জিতলে আনন্দ করেন। হারলে ভেঙে পড়েন। ভোটের ময়দান থেকে ছিটকে গিয়ে মোহনবাগানকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন তিনি।
বারাসতে বামফ্রন্ট মনোনীত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হিসেবে সপ্তাহ দেড়েক আগে প্রবীরের নাম ঘোষণা করেছিলেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। কিন্তু গত সোম এবং মঙ্গলবার সেই প্রবীরকে ঘিরে অভিযোগ ওঠে, বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে। সেই সূত্রেই বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনে লেখা হয়েছিল, বারাসতে প্রার্থীবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তবে তার অন্যথা হয়নি। বিকেলেই প্রবীরকে সরিয়ে বারাসতের প্রার্থী হিসেবে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন বিমান।
প্রবীর কলেজ জীবনে এসএফআই করতেন। তার পরে মাঝে তাঁর রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। শিক্ষকতার চাকরির সময়ে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ করতেন। কিন্তু দলীয় রাজনীতিতে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক করা শুরু করেন। ২০১৮-’১৯ সাল থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি খানিকটা দূরে সরে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, ওই সময়েই বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় তাঁর। কিন্তু ফের ২০২২ থেকে তাঁর মনবদল হয়। আবার ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁর। প্রবীরের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, সঞ্জীবের সঙ্গেই তাঁর মতান্তর হয়েছিল এক সময়ে। পরে তা মিটে যায়।
প্রার্থী হিসেবে প্রবীরের নাম বারাসত কেন্দ্রের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয়ে গিয়েছিল। আবার তা মুছে এখন সঞ্জীবের নাম লিখতে হচ্ছে। আর প্রবীর বলছেন, ‘‘একে তো মনমেজাজ ঠিক নেই, তার মধ্যে বাড়িতে স্ত্রী, মেয়ে কটাক্ষ করছে! কী যে করি!’’ তবে তাঁর মনখারাপের ওষুধ মোহনবাগানই হতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীর। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ছিলাম অঞ্জনদার (প্রয়াত অঞ্জন মিত্র) লোক। আবার নতুন করে ক্লাবে যাওয়া শুরু করব। ক্লাবের জন্য সময় দেব, কাজ করব।’’
কিন্তু মোহনবাগানে তিনি কি সেই সুযোগ পাবেন? তৃণমূল নেতা তথা মোহনবাগান ক্লাবের অন্যতম কর্তা কুণাল ঘোষ অবশ্য দরজা খোলা রাখার বার্তাই দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উনি কাজ করতে চাইলে ক্লাবের সঙ্গে কথা বলব। কী ভাবে ওঁকে ব্যবহার করা যায় নিশ্চয়ই দেখব।’’