—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে যে বার সরকার পালাবদল হয়, সেই ভোটে এই এলাকা আস্থা রেখেছিল বামের উপরে। তার পর থেকে বেশির ভাগ ভোটেই ফুটেছে ঘাসফুল। কিন্তু ব্যবধানে মেলেনি ধারাবাহিকতা। কখনও তা দাঁড়িয়েছে হাজার তিনেক ভোটে, আবার কখনও ‘লিড’ মিলেছে লক্ষের আশপাশে। পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকা এ বার কার উপরে আস্থা রাখে, নজর রয়েছে সব পক্ষেরই। এই এলাকার ফল বড় প্রভাব ফেলবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সার্বিক ফলাফলে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পাণ্ডবেশ্বর ও দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লক নিয়ে নবগঠিত এই বিধানসভা কেন্দ্র সিপিএমের দখলে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির কাছে হার হলেও, একমাত্র পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভায় এগিয়েছিল তৃণমূল। ২০১৬ সাল থেকে তৃণমূলের দখলেই আছে এই বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আবার বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় হাজার ছয়েক ব্যবধানে এগিয়ে যান এই এলাকায়। গত বিধানসভা ভোটে আবার তৃণমূল জেতে হাজার তিনেক ভোটে। ২০২২ সালে আসানসোল কেন্দ্রের উপনির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে তৃণমূল এখানে এগিয়ে ছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকে সিপিএম দু’টি ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে সিপিএম এবং বিজেপি একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপিতে যোগ দেন। তার পরে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত সদস্য ও এক জন জেলা পরিষদ সদস্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই এলাকায় তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলের অন্দরেই ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। সম্প্রতি বিজেপির এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় বিক্ষোভও দেখায়।
কোনও দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। দলের আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট ও উপনির্বাচনে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে তৃণমূল। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তা হবে না বলে তাঁদের আশা। বিজেপি নেতা জিতেন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, সন্ত্রাস মোকাবিলা ও প্রচারে খুব জোর দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা।’’ ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে বামেরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রবীর মণ্ডলের দাবি, প্রচারে ভাল সাড়া মিলছে।
তৃণমূলের চিন্তা, গত লোকসভা উপনির্বাচন ছাড়া এই বিধানসভা কেন্দ্রে পাণ্ডবেশ্বর ব্লক থেকে দল কখনও ‘লিড’ পায়নি। প্রতি বারই দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক দলকে জয় এনে দিয়েছে। এমনকী, যে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের এখানে পিছিয়ে পড়ার কারণ পাণ্ডবেশ্বর ব্লকে অনেকটা পিছিয়ে থাকা। সে বারও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে আড়াই হাজারের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে গত উপনির্বাচনে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকেও বড় ব্যবধান দলের এগিয়ে থাকা খানিক স্বস্তি দিচ্ছে তৃণমূলকে। কিন্তু দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে যে সুজিত মুখোপাধ্যায় ২০০৮ সাল থেকে দলের সভাপতি ছিলেন, সম্প্রতি তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে সুজিতের কিছু অনুগামী ক্ষুব্ধ বলে দল সূত্রের দাবি। তা নজরে রয়েছে বিরোধীদেরও।
তবে সুজিত বলেন, ‘‘ব্লক সভাপতি না থাকলেও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। উপনির্বাচনের থেকেও বেশি ভোটে এই ব্লক থেকে দলকে এগিয়ে রাখাই লক্ষ্য।’’ তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দ্বন্দ্বের কথা ভিত্তিহীন। তাই এ সবের কোনও প্রভাব পড়বে না।’’